২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এক দশকে লবণাক্ত পানি শোধনাগার

-

- দাতার অনুদান কমায়, প্রকল্প খরচও কমলো
-প্রকল্পের মেয়াদ সাতবারে ৭ বছর বৃদ্ধি পায়

লবণাক্ত পানি পরিশোধনাগার বানাতেই এক দশক অতিক্রম। অথচ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এই প্রকল্পটি তিন বছরে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগপরবর্তী সময়ে উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাতে দফায় দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কমে যায় জাইকার অনুদান। তিন বছরের প্রকল্প এক দশকে অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে হবে। একটি প্রকল্প যদি সমাপ্ত করতে এক দশক লাগে তাহলে প্রকল্পের সুফল দেশের সাধারণ মানুষে কিভাবে পাবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমিক্ষয়, লবণাক্ততা, আর্সেনিক দূষণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানীয় জলের দুষ্প্রাপ্যতা, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত উত্তোলন, জলাবদ্ধতা- এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয়কে আরো বাড়িয়ে দেয়। উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লবণাক্ত পানি অনুপ্রবেশ করে বিদ্যমান পানি সরবরাহ প্রক্রিয়া হুমকির সম্মুখীন হয়। অধিকন্তু স্বাভাবিক সময়েও এই অঞ্চলের পানি সরবরাহের কাভারেজ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এই প্রকল্প।

লবণাক্ত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগপরবর্তী সময়ে উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি ২০১৩ সালে হাতে নেয়া হয়। এ ছাড়া লবণাক্ত পানি পরিশোধনের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধি করাও প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১৮৯ কোটি ছয় লাখ টাকা। যাতে জাইকার অনুদান হলো ১৪৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তিন বছরে সমাপ্ত করার কথা। তা কয়েকবার মেয়াদ বাড়িয়েও হয়নি।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো- ৩০টি মোবাইল স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংগ্রহ করা, ২১টি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সবগুলোরই যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ও স্থাপন করা, জাইকার এজেন্ট কর্তৃক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ব্যবহারের ওপর স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ এবং শেড নির্মাণ এবং পানির ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা। খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের ২১টি উপজেলায়, পাইকগাছা, দাকোপ, কয়রা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, শরণখোলা, মংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, কচুয়া, চিতলমারী, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, পাথরঘাটা, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর, গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। আর মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩৬ কোটি ৯৭ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ১২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৯৩.৬৮ শতাংশ। সাত বছর প্রকল্পের মেয়াদ সাত বছর বাড়ানো হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩০টি মোবাইল স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লø্যান্ট সংগ্রহ করা হয়। আর ২১টি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সবগুলোরই যন্ত্রাংশ স্থাপন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ছয়টি প্ল্যান্টের কমিশনিংয়ের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ১৫টি প্ল্যান্টের কমিশনিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম প্রধান বলছেন, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে। এ দিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অর্থ অবমুক্তির সময়সীমা, জুন মাসে ব্যয় বিল দাখিল ও ফেরত বিল নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অর্থ অবমুক্তির সময়সীমা আগামী ১২ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আন্তঃখাত সমন্বয় দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদিত না হলে, যথাসময়ে প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দুরূহ হতে পারে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement