২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উচ্চ শুল্কের কারণে সঙ্কটে সম্ভাবনার পেপারকাপ শিল্প

বাজেটে শুল্ক শূন্য করার দাবি শিল্পমালিকদের
- ছবি : সংগৃহীত

৬১ শতাংশেরও বেশি আমদানি শুল্কের কারণে পরিবেশবান্ধব পেপার বা কাগজের কাপ শিল্প পেরে উঠছে না পরিবেশধ্বংসকারী প্লাষ্টিক কাপের কাছে। বাজার সয়লাব প্লাষ্টিক কাপ দিয়ে। শুল্ক মূল্য, শিপিং খরচসহ প্রতি কেজি তা হয়ে যায় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। যা পুরো বিশ্ব বাজারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। অথচ শতভাগ ভার্জিন পেপার পাল্প থেকে তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ।

ভারতের উদ্যোক্তারা শূন্য শুল্কে পেপার কাপের কাগজ আমদানি করতে পারেন। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা পেপার কাপের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। অন্যদিকে নেপালে সাড়ে ৭ শতাংশ, মিয়ানমারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। আর বাংলাদেশে ৬১ শতাংশ শুল্ক মাত্রাতিরিক্ত বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

কাঠ ও বাঁশের উৎপাদিত পেপার থেকে ওয়ান টাইম পেপার কাপ তৈরি হয় বলে এটি সহজে পচনশীল ও শতভাগ পরিবেশবান্ধব। কিন্তু এর কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় উচ্চ শুল্ক দিয়ে। যার জন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াতে বাজারে টিকতে পারছে না পরিবেশ ও কৃষিজমি ধ্বংসকারী প্লাস্টিকের কাপের কাছে।

তরুণ উদ্যোক্তা ও বিগট্রি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো: জাহাঙ্গীর আলম অপু জানান, এই শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগামী বাজেটে আমদানি শুল্ক কমানো শূণ্য করা দরকার। তাহলে কাপের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসবে। প্লাস্টিক কাপ ব্যবহার বন্ধ হবে। পরিবেশ বাঁচবে।

জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের পেপার কাপের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি মাসে পেপার কাপের চাহিদা ২০ কোটি পিসেরও বেশি। সব মিলিয়ে বছরে দেশে পেপার কাপের বাজারও প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকার। বাংলাদেশে ওয়ান টাইম বা পেপার কাপের মাসিক চাহিদার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে প্লাস্টিকের কাপ দিয়ে। কাগজের কাপের মোট মাসিক উৎপাদন প্রায় ১ কোটি পিসের কাছাকাছি। এই চাহিদার ৫০ শতাংশ করপোরেট ক্রেতার কাছে যাচ্ছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ যাচ্ছে লোকাল বাজারে। যা দেশের মোট ওয়ান টাইম কাপের ব্যবহারের ২০ শতাংশ। বর্তমানে দেশে সচল কাগজের কাপ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৪০টি। যাদের উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে সমগ্র দেশের কাপের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু প্লাস্টিকের কাপ সহজ লভ্য হওয়ায় দেশের ৮০ শতাংশ লোকাল বাজার প্লাস্টিকের দখলেই রয়ে গেছে। এই ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বড় একটা অংশ মিশে যাচ্ছে আমাদের পরিবেশের সাথে। আমরা সবাই অধিকভাবে জ্ঞাত যে প্লাস্টিক দ্রুত পচনশীল না। আরো দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই প্লাস্টিকের কাপগুলো অধিকতর পাতলা হওয়ায় পরিচ্ছন্নকর্মী বা অন্য কেউ রিসাইক্লিং করার জন্য রাস্তা থেকে কুরিয়ে নেয় না। যার প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে ভূমি। ব্যাহত হচ্ছে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। দূষণ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী শহর কেন্দ্রিক নদী-নালা।

পেপার কাপ ও প্লেট উৎপাদক বিগট্রি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো: জাহাঙ্গীর আলম অপু’র সাথে এই শিল্প নিয়ে আলোচনায় তিনি জানান, কাগজের কাপের আকার নির্ধারণ করার জন্য একক হিসেবে আউন্স অথবা মিলি লিটার সর্বাধিক প্রচলিত। পেপার কাপ, কফি কাপ, সফট ড্রিঙ্কস কাপ, আইসক্রিম কাপ এবং অফিস, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও হাসপাতালে পানীয় পানে ব্যবহারের প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশে পেপার দিয়ে ওয়ান টাইম প্যাকেজিং, পেপার কাপ ও পেপার প্লেট দ্রুত অগ্রগামী ক্রমান্বয়ে দ্বিগুণ হারে গলি থেকে সৌখিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে চাহিদা বেড়েই চলছে। বিশ্ববাজারেও চাহিদা ব্যাপক। ফলে এটি রফতানির একটা বড় বাজার হতে পারে। যা থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারবে।

তিনি বলেন, মানুষের মাঝে কাগজের কাপ ব্যবহারের সচেতনতা এসেছে, ফলে তারা পার্থক্য করছে কাগজের কাপ, পাস্টিকের তৈরি কাপের চেয়ে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবুও একটা বড় খুচরা ও পাইকারি বাজার দখল করে আছে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপ ও প্লেট। কারণ আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কম মূল্যের পণ্যের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বেশী।

অপু জানান, কাগজের কাপ তৈরির উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের শতভাগ চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা থাকার পরও সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন করতে পারছে না। তার প্রধান কারণ, কাঁচামাল আমদানি করতে শুল্কের হার বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপরে। বিক্রয় মূল্য হয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিকের কাপের দ্বিগুণ। অপরদিকে, প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো ঠিকমতো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের কাপ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের পেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামালের শুল্ক মূল্য হওয়া উচিত ০-১০ শতাংশের মধ্যে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শুল্ক দিতে হচ্ছে ১ দশমিক ১ ডলার এর ৫৮-৬১ শতাংশ প্রতি কেজি কাগজে। যেখানে প্রতি কেজি পেপারের শুল্ক মূল্য দাঁড়ায় ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু আমদানিতে প্রতি কেজি কাঁচামালের ক্রয়মূল্য এক শ’ থেকে ১১০ টাকা। শুল্ক মূল্য, শিপিং খরচসহ তা হয়ে যায় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। যা পুরো বিশ্ব বাজারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আমদানি করা পেপার কাপের কাঁচামালের শুল্ক শূণ্য শতাংশ। ফলে ভারতে পেপার কাপের ব্যবহারের বিপ্লব ঘটেছে।

তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, আমাদের দেশে শুল্ক কম হলে প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার কমানোসহ বিশ্ব বাজারে রফতানির একটা বড় বাজার সৃষ্টি হতো। এতে করে পেপার কাপের উদ্যোক্তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারত প্লাস্টিক কাপ বা প্লেটের সমমূল্যে বাজারে পেপার কাপ, পেপার প্লেট বিক্রি করা যেত। প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ হারাতো ভোক্তারা। রেহাই পেত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে আমার এ দেশের মানুষ, এই বাংলার কৃষি উর্বর মাটি ও বাঙ্গালির রক্তে মিশে থাকা নদী। আমাদের রাষ্ট্র ও শুল্ক গবেষকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি, এ দেশের মানুষ, মাটি ও নদী বাঁচাতে কাগজের কাপের শুল্ক কমিয়ে পরিবেশবান্ধব পেপার কাপ উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অপু।

শিল্প সংশ্লিষ্ট ও পরিবেশবিদরা জানান, আমাদের পেপার কাপগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব। কারণ, মাটিতে ফেলে দেয়ার ২১ দিনের মধ্যে কাপগুলো পুরোপুরি পচে গিয়ে জৈব সারে পরিণত হয়। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় পেপার কাপের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল