২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পুলিশের বাধা, গ্রেফতার

তারাবিহ নামাজ থেকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ

বায়তুল মোকাররম চত্বরে বাদ জুমা ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির বিক্ষোভে পুলিশের অ্যাকশন -


তারাবির নামাজ আদায়ের সময় গুলশানের একটি ইসলামী সেন্টার থেকে ইমাম ও মুসল্লিদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়ে সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে গতকাল জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় গেলে সেখানে পুলিশ বাধা দিয়ে লাঠি চার্জ করে। এ সময় মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে।
‘গত ২৭ মার্চ গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ার সংলগ্ন একটি ইসলামী সেন্টার থেকে তিনজন হাফেজ, দুইজন নারী ও একজন শিশুসহ ১৭ জনকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে, অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সব নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পীর সাহেব মাওলানা আবু তাহের জিহাদি আল কাসেম, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, মুসলিম জনতা ঐক্য পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, জনসেবা আন্দোলনের আমির মুফতি ফখরুল ইসলাম, ইমাম-খতিব ঐক্য পরিষদের আমির মুফতি মাসুদুর রহমান, পীরে কামেল মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মুফতি আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ মোশারফ হোসাইন, মাওলানা আতিকুর রহমান নোমানী প্রমুখ।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয়, সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হলেও তারাবির নামাজ আদায়ের সময় ১৭ জন ধর্মপ্রাণ মানুষসহ নারী শিশুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে সরকার গণমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে। তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহবান জানান।
তারা আরো বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে মুসলিম উম্মাহ ইবাদত-বন্দেগি করে সময় পার করছে। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সাহরি, ইফতার, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলের মতো ইবাদতে মশগুল থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বা রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মপালনকে বাধা দিয়ে সংবিধান অবমাননার মতো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত করছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক)-এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মপালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবেন।’ তাহলে নামাজরত অবস্থায় তাদের গ্রেফতার করা হলো কেন? যা জনমনে রীতিমতো বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।


বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। কিন্তু গুলশানে মুসল্লিদের আটকের ঘটনা সংবিধানের সেই অধিকারকে মারাত্মকভাবে খর্ব করেছে। কারণ, বর্তমান সরকার শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হয়ে ইবাদত-বন্দেগি পালনে বাধা দিয়েছে। মুসল্লিদের গ্রেফতার করা হয়েছে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে। আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের অন্যায়ভাবে গুম, গ্রেফতার, মামলা ও হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। আলেম-ওলামা ও ইসলামী অনুশাসন মেনে জীবন পরিচালনাকারী নাগরিকদের হয়রানি ও গ্রেফতার করে ইসলাম বিদ্বেষের চরম নজির তুলে ধরেছে তারা। ২৭ মার্চ গুলশানের যে ইসলামিক সেন্টারটি থেকে নারী শিশু ও ইমামসহ যাদের আটক করা হয়েছে, সেটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচালনা করে আসছেন।
তারা আরো বলেন, দেশের ইসলামপ্রিয় প্রত্যেক নাগরিক নিজেদের মা-বোন ও শিশুদের নিরাপত্তা, ইজ্জত আবরুর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও গুরুত্ব দেয়। কোনো অবস্থাতেই সম্মানিতা নারীদের হয়রানি মেনে নেয়া হয় না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ২৭ মার্চে রাতে নামাজরত নারী ও শিশুদের গ্রেফতার করে সরকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কলিজায় আঘাত হেনেছে। তাই সময় এসেছে প্রতিবাদের। তারা সব নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় সরকারকে তৌহিদি জনতার রোষানলে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement