২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৃশংসতার শিকার শিশু আয়নী

চট্টগ্রামে আয়নীর (ইনসেটে) হত্যাকারী রুবেলকে আদালতে নিচ্ছে পুলিশ : নয়া দিগন্ত -

গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রামে নানা টোপ দিয়ে শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটছে। শিশু বর্ষা, আয়াত ও সুরমা খুনের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী। তার বয়স ১০ বছর। আয়নীকে ধর্ষণের পর বালিশচাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে নগরের পাহাড়তলী থানার পুকুরপাড় মুরগির ফার্ম এলাকার একটি ডোবা থেকে আয়নীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পিবিআই। ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো মতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হয়।
নিহত আবিদা সুলতানা আয়নী চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার কাজীর দীঘির বাসিন্দা আবুল কাশেমের মেয়ে। গ্রেফতার মো: রুবেল একই এলাকার মৃত আব্দুল নূরের ছেলে। সে ওই এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করত।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশসুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ২৮ মার্চ মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে তার মা পোশাককর্মী বিবি ফাতেমা সবজি বিক্রেতা রুবেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শারমিন জাহান অভিযোগ গ্রহণ করে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা নথিভুক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। শিশু আয়নী নিখোঁজের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর থেকে রুবেলকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর মঙ্গলবার রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে রুবেল স্বীকার করে, মেয়েটিকে ২১ মার্চ নিখোঁজের দিনই সে কাজির দীঘি এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ভবনের চারতলায় নিয়ে ধর্ষণ করে।’
তিনি আরো বলেন, তরকারি কেনার সুবাদে নিহত শিশু আয়নীর মায়ের সাথে তরকারি বিক্রেতার পূর্বপরিচয় ছিল। আয়নীও রুবেলের পরিচিত ছিল। সে সুবাদে রুবেল আয়নীকে বিড়ালছানা নিতে স্কুল শেষে ক্লাবের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলে। তার কথামতো আয়নী স্কুল ছুটির পর স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করে সেখানে গেলে রুবেল তাকে একটি খালি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ বস্তায় ভরে ময়লা-আবর্জনায় ভরা ডোবায় ফেলে দেয়।
এ দিকে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
লাশ উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী শিশুর মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম, রুবেল আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে, রুবেল নাকি ভালো ছেলে! রুবেল এ কাজ করতে পারে না। তোমার মেয়ে প্রেম করে! আমার ১০ বছরের মেয়ে কিভাবে প্রেম করে? আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমার মেয়ের কাপড় পরবে কে? বেতন পেলে আমার মেয়েকে মিষ্টি-সন্দেশ কিনে দিতাম। এখন কাকে কিনে দেবো? আমার একমাত্র মেয়েকে রুবেল এভাবে হত্যা করল!’
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ স্কুল থেকে আসার পর নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও না পেয়ে থানায় মামলার চেষ্টা করেন স্বজনরা, কিন্তু থানায় মামলা না নেয়ায় মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২- এ মামলার আবেদন করেন শিশুটির মা।


আরো সংবাদ



premium cement