২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোমানিয়া সীমান্তে দ্বিতীয় দফা আটকদের ঠাঁই হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে

পালানো ঠেকাতে কঠোর দেশটির সরকার
-


পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় বৈধভাবে যাওয়ার পরই শ্রমিকরা দুষ্টচক্রের খপ্পরে পড়ে ইতালীসহ অন্যান্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। এমন প্রবণতার কথা জানার পর কর্মী পালানো ঠেকাতে রোমানিয়ান সরকার এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট এবং ইমিগ্রেশন তল্লাশি জোরদার করার পাশাপাশি রোমানিয়ান সীমান্তে দ্বিতীয় দফায় আটক হওয়া শ্রমিকদের ঠাঁই হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। সেখানে কয়েক দিন রেখে তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যার আগে) রোমানিয়ার বুখারেস্টে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের তৃতীয় সচিব ও দূতালয় প্রধান শেখ কৌশিক ইকবালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে দেশটির শ্রমবাজারের সর্বশেষ হালচাল বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
এর আগে গত বুধবার কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ৬ষ্ঠ তলায় রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা কন্সুলেট অফিসে খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, এদিন ভিসা সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে ওই অফিসের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানান, রোমানিয়া থেকে যেসব কর্মী ইউরোপে পালিয়ে যাচ্ছেন তাদের আটক করে সরাসরি ৪৫ দিনের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এরপর ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।


এমন তথ্যর সত্যতা জানতে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতালয় প্রধান শেখ কৌশিক ইকবাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের কাছে রোমানিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো চিঠি বা নির্দেশনা আসেনি। তবে নরমালী যে সিস্টেমটা এখানে চালু রয়েছে, সেই বিষয়টি তিনি উল্লেখ করে বলেন, রোমানিয়াতে আসার পর প্রথম কেউ পালানোর সময় সীমান্তে আটক হলে তার কাছ থেকে আইনশৃংখলার সাথে সম্পৃক্তরা মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। তারা তাকে বলে, তুমি এখান থেকে চলে যাও। দ্বিতীয়বার যদি আবারো একই ব্যক্তি বর্ডার ক্রস করার সময় আটক হয়, তখন তাকে সেখান থেকে সরাসরি কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্টে তোলার পর ওই কর্মী (অ্যাসাইলাম) রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার আবেদন করার সুযোগ পান। এগুলো প্রসেস হতে কয়েক দিন সময় লাগে। ওই সময় পর্যন্ত আটক ব্যক্তিদের রোমানিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের আবেদন বেশির ভাগ রিজেক্ট হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন না। অনেক ভালো। সিরিয়া বা আফগানিস্তানের মতো নয়। এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ কৌশিক ইকবাল বলেন, যাদের সাথে পাসপোর্ট থাকে তাদের রোমানিয়া সরকার সরাসরি দেশে ফেরত পাঠায়। আর যাদের পাসপোর্ট থাকে না তাদের ডাটাবেজ থেকে নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত নিয়ে দূতাবাসের মাধ্যমে ট্রাভেল পারমিট নিয়ে তারাই ফেরত পাঠায়। ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দূতাবাসকে অবহিত করে না। ২০২২ সালে মোট ৭০টির মতো ট্রাভেল পারমিট দূতাবাস থেকে ইস্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।


রোমানিয়ার শ্রমবাজারের হালচাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোমানিয়াতে এ পর্যন্ত যত শ্রমিক এসেছে সব শ্রমিক দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ী আসেনি। তিনি বলেন, ধরা যাক ২০২২ সালে অ্যাম্বাসীর মাধ্যমে মোট ২০ হাজার শ্রমিক এ দেশে এসেছে। এর মধ্যে দূতাবাসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২ হাজারের বেশি শ্রমিক আসেনি। বাকি সবাই এসেছে কোম্পানি টু কোম্পানির মাধ্যমে। মানে একক ভিসার মাধ্যমে। দূতাবাসের মাধ্যমে যেসব শ্রমিক এসেছে সেগুলো গ্রুপ ডিমান্ড লেটারের মাধ্যমে এসেছে। তাদের আসার আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে নিয়োগকারী কোম্পানি ঠিক আছে কি না, থাকা, খাওয়া ও বেতনসহ অন্য সব ঠিক আছে কি না ? এসব যাচাই বাছাই করার পর তখন ওই গ্রুপ কর্মীর নামে নিয়োগানুমতির অনুমোদন দেয়া হয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কর্মী আসার ক্ষেত্রে রোমানিয়াতে অনেক ভুয়া কোম্পানি তৈরি হয়েছে। তারা লোক আনার পর কাজ দেয় না। এরপরও একটি কোম্পানিতে ১০ জন লোক এলে সেখান থেকে ৬ জন পালিয়ে যায়। যে ৪ জন কাজ করতে চায় তাদেরও রোমানিয়ায় গড়ে উঠা চক্র পার্কে/ মসজিদে মোটিভেট করে ফেলে। তারা বলে চলো ইতালি স্পেনে চলে যাই। পরে তাদের খপ্পরে পড়ে ওই ৪জনও ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। আমরা খবর নিয়ে এমন তথ্য পেয়েছি। পালানো বন্ধ করার বিষয়ে দূতাবাসের কোনো পরামর্শ আছে কি-না জানতে চাইলে শেখ কৌশিক ইকবাল বলেন, আমাদের দূতাবাসের অনুরোধে রোমানিয়া সরকার এ বছর থেকে শ্রমিক আসার ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এর মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট এবং ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স তারা ভালোভাবে চেক করছে। একক ভিসায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার আগে কি দূতাবাসের কোনো পরামর্শ নিচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএমইটি কি করছে, কিভাবে কর্মীদের নামে ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে সেটার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না।


জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ বিডির কর্ণধার মোহাম্মদ লোকমান শাহ গত সপ্তাহে শ্রমিক পালানোর বিষয়সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, প্রয়োজনে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কঠোর আইন করা প্রয়োজন। নতুবা আমাদের ইউরোপের নতুন এই সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়বে। তার মতে, যে করেই হোক শ্রমিক পালানো বন্ধ করতেই হবে। একই সাথে দেশটিতে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। তাহলেই দেশে প্রচুর রেমিট্যান্স আসবে।
এদিকে ঢাকার কাকরাইলে রোমানিয়া অস্থায়ী ভিসা সেন্টারে আসা শ্রমিকদের অনেকেই সাক্ষাৎকার দিতে এসে উত্তীর্ণ হতে পারছে না। দোভাষীর মাধ্যমে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই কি কারণে রোমানিয়া যাচ্ছে, সেখান থেকে পালিয়ে যাবে কি-না এমন সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে গিয়ে তারা উল্টাপাল্টা বলছে। যার কারণে তাদের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত করা হচ্ছে। আবার অনেকেই সাক্ষাৎকার দিয়ে উত্তীর্ণও হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল