২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশের প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের সর্বোচ্চ ব্যবহার নির্ধারিত নেই

বাড়ছে উচ্চরক্তচাপসহ নানা ব্যাধি
-

বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের পরিমাণ ব্যবহারে সর্বোচ্চ কোনো সীমা সরকারিভাবে নির্ধারণ করা নেই। ফলে বাজারজাত কনজ্যুমার প্রোডাক্ট তৈরি করে এমন কোম্পানিগুলো খাবারের স্বাদ বাড়াতে তাদের পণ্যে ইচ্ছেমতো লবণ ব্যবহার করছে। প্যাকেটজাত খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা ২০১৭ অনুসারে, ‘প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিদ্যমান লবণের পরিমাণ মোড়কের লেবেলে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হলেও বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ খাবারে প্যাকেটে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে।
বাজারে প্রাপ্ত ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১.৫ গ্রামের বেশি লবণ পাওয়া গেছে। কেবল মাত্র এক প্যাকেট চিপস খেলেই এক দিনের প্রয়োজনীয় লবণের অর্ধেক পেটে চলে যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে। অপর দিকে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এক সমীক্ষার পর বলেছে, বাজারে প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ রয়েছে।
প্যাকেটজাত খাবার থেকে এখনই অতিরিক্ত লবণ কমিয়ে আনতে না পারলে স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকবে। কেবলমাত্র উচ্চরক্তচাপ বাড়লে নষ্ট হতে পারে চোখ, কিডনিসহ শরীরের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অঙ্গ। একই সাথে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকিও বাড়বে খাবারে লবণ কমাতে না পারলে।
লবণের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘লবণ বয়স্ক মানুষের জন্য খুব বেশি উপকারী নয়। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের কাজে লাগে। তাই যথাসম্ভব লবণ পরিহার করা উচিত। এটা কেবল খাবারের স্বাদ বাড়ায় কিন্তু লবণ পরিহার করলে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে লবণ খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে।’
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, বাজারে বিক্রি হয় এমন বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত খাবারগুলোতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য বেশি লবণ দেয়া হয়। এসব খাবার যত কম খাওয়া যাবে তত স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। তারা বলছেন, বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত খাবারে লবণ কমিয়ে আনলে তখন তা খেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণায় প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে।
দোকানে বহুল বিক্রীত চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ ও ঝালমুড়ির কোনোটিতেই নির্ধারিত মাত্রার লবণ পাওয়া যায়নি বরং এগুলোতে দ্বিগুণের বেশি লবণ রয়েছে। একইভাবে আচার ও চাটনির ৮৩ শতাংশ, চিপসের ৬৩ শতাংশ এবং ডাল-বুট ভাজার ৬০ শতাংশে দ্বিগুণ লবণ রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। চিপস, ডাল-বুটের যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে এদের একটিতেও নির্ধারিত মাত্রার লবণ পাওয়া যায়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই এ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। গড়ে একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ১৫ বার অর্থাৎ দিনে দুই বারের বেশি এসব খাবার গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ এর জন্য দায়ী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিপার্টমেন্ট অব নিউট্রিশন ফর হেলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. ফ্রান্সিসকো ব্রাঙ্কা বলছেন, বিশ্বে প্রতি চারজনের একজন বয়স্ক মানুষের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। বেশি লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চরক্তচাপে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মানুষের ৮০ শতাংশ অতিরিক্ত লবণ আসে প্যাকেটজাত খাবার থেকে। কিন্তু ঘরে তৈরি খাবার খেলে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমে। ড. ফান্সিসকো বলেন, লবণ কমিয়ে আনলে এক সময় এই কম লবণ খেতেই নিজেকে অভ্যস্ত রাখা যায়। অল্প কয়েক সপ্তাহ চেষ্টা করলে খাবার থেকে লবণ কমিয়ে আনা যায়। আমরা প্যাকেটজাত খাবারের পরিবর্তে ফল ও শাক-সবজি খাওয়ায় অভ্যাস করতে পারলে যেমন লবণ কমে আসবে তেমনি উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে আনতেও সহায়তা করবে। উল্লেখ্য, ফল ও শাক-সবজিতে থাকে পটাশিয়াম এবং পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।


আরো সংবাদ



premium cement