১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গরুর মতো মুরগির গোশত ডিমও নাগালের বাইরে

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের হাহুতাশ
-

উচ্চমূল্যের কারণে গরুর গোশত খাওয়া অনেক আগেই প্রায় বাদ দিয়েছেন নিম্নবিত্তরা। মাঝখানে কেজি ৭০০ টাকা ছাড়ার পর মধ্যবিত্তরাও গরুর গোশত কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। গরিবের আমিষ-পুষ্টি বলতে যা ছিল সেই মুরগির গোশত ও ডিমও এখন নাগালের বাইরে। আর কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। সিয়াম সাধনার এই মাসে এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকে। এ অবস্থায় মুরগির গোশত ও ডিমের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে পোলট্রি মুরগির কেজি প্রায় আড়াই শ’ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর ডিম ৪৮ টাকা হালি। মুরগির গোশত ও ডিমের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে।

তবে মুরগির গোশত ও ডিমের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ার পরও খামারিরা বলছেন তারা লাভ করতে পারছেন না। মুরগির খাদ্যমূল্য বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় তারা পোষাতে পারছেন না। গত ৫ মার্চ ডিআরইউতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে লোকসানের শিকার হয়ে খামারিরা তাদের প্রায় ৬৪ হাজার পোলট্রি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, দেশে প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার খামারের মধ্যে বর্তমানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার সচল রয়েছে। এর ফলে প্রতিদিনের মুরগির গোশত ও ডিম উৎপাদনও কমছে। আগে যেখানে দৈনিক মুরগির গোশত উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন; সেখানে তা কমে চার হাজার ২১৯ মেট্রিক টনে নেমেছে। অর্থাৎ গোশতের উৎপাদন ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। একইভাবে ডিমের উৎপাদনও প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। আগে প্রতিদিন ৬ দশমিক ৬৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হলেও তা কমে ৪ দশমিক ৩২ কোটি পিসে নেমেছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো: মহসিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডিম ও মুরগির গোশতের খুচরা দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ দিন খামারিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। ২০১০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ডিমের দাম নির্ধারণ কমিটি করা হয়। কিন্তু সেই কমিটি অকার্যকর হয়ে আছে। এই কমিটির কাছে খামারিদের দাবি, তারা যেন উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে মাসে অন্তত দু’বার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাতে করে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার মনির আহম্মেদ বলেন, এখন মুরগির যে উৎপাদন খরচ, তার থেকে ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করলে সেটি হবে যৌক্তিক দাম। এ ছাড়া একটা ডিমের উৎপাদন খরচ থেকে মূল্য ২৫-৫০ পয়সা বেশি হলেই খামারিরা টিকে থাকতে পারবে। এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। কারণ ফিড, বিদ্যুৎ বিল, মেডিসিন-সহ সব কিছুর দামই এখন চড়া। এই অবস্থায় সরকারের উচিত আসলে দাম কত হওয়া দরকার সেটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে পর্যালোচনা করা।

খামারিরা বলছেন, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারি বিক্রি করছে ১৯০-২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির গোশত বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা পর্যন্ত। অন্য দিকে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১১.৭১ টাকা, যেখানে খামারি লোকসান দিয়ে বিক্রি করছে ৯.৪৫ টাকায়। এই অবস্থার অবসানে খামারিরা সরকারের হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement