১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুধের শিশুকে নিয়ে সাগরে মাছ ধরা

নদীর মাঝে নৌকায় মাহবুব ও রোকেয়ার পরিবার : নয়া দিগন্ত -

চর মোন্তাজ, পটুয়াখালী থেকে ফিরে 

একটু পরপরই কাশি দিচ্ছিল আল আমিন। কাশির ধরন শুনেই বুঝা যাচ্ছিল বেশ ঠাণ্ডা লেগেছে দুধের এই শিশুটির। কিন্তু তাকে বাড়িতে রেখে আসার কোনো সুযোগ নেই রেখাজান বেগমের। ‘আমি বাড়িতে থাকলে আমার স্বামীর সাথে মাছ ধরার কাজ করবে কে?’ কেন ঠাণ্ডায় আক্রান্ত শিশু ছেলেকে সাথে নিয়ে সাগরে এলেন? এর উত্তরে এই ছিল রেখা জানের জবাব। এরপরই কাঁদতে থাকা শিশুটিকে নৌকার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করলেন তিনি। সেই সাথে এক হাতে ধরা নৌকার বৈঠা। তার স্বামী শহীদ তখন জাল টেনে তুলছিলেন পানি থেকে। বাবাকে জাল টানায় সহায়তা করেছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া মেয়ে রেশমা বেগম ও প্রথম শ্রেণীতে পড়া অপর মেয়ে আসমা। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় কলাগাছিয়া নদীতে এভাবেই পুরো পরিবারকে পাওয়া গেল জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত থাকতে।


১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পটুয়াখালীর চর মোন্তাজ থেকে আরো দক্ষিণে কলাগাছিয়া চরের কাছে নদীতে খুব একটা মাছ মিলছিল না শহীদের পাতা জালে। তারা নৌকা নিয়ে গিয়েছিলেন মোহানার সীমানা পেরিয়ে সাগরে। কিন্তু আকাশে মেঘের উপস্থিতি এবং বেশ বাতাস বইতে থাকায় দ্রুত তীরের কাছে এসে চ্যানেলে জাল ফেলেন। এই শহীদ-রেখাজানরা মান্তা সম্প্রদায়ের লোক। এরা সাগরের বেদে সম্প্রদায়। পটুয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলে এরা মান্তা নামেই পরিচিত। ৭০-৮০ বছর ধরে এরা সাগরে মাছ ধরেই জীবন ধারণ করে। ইঞ্জিনচালিত এই নৌকায় পাঁচ সদস্যের সাথে কথা বলার পর্ব শেষ করে আরো কিছু দূর এগোতেই মিলল পাঁচ সদস্যের আরেক জেলে পরিবার। এখানেও তিন শিশু সন্তান আর স্বামী-স্ত্রীর উপস্থিতি। সক্ষমরা জাল টানছিল। পুরুষ লোকটির নাম মাহবুব। তার স্ত্রীর নাম রোকেয়া। সাথের তিন ছেলে সাকিব, আকিব ও আসিফ। পাশের নৌকার রেশমা, আসমারা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেলেও সে ভাগ্য হয়নি সাকিব ও আকিবের। বড় ছেলে সাত-আট বছরের সাকিব একটু পরপরই লুঙ্গিতে কোঁচা দিয়ে বাবাকে মাছ ধরকে সহায়তা করছিলেন।


সাকিব, আকিবরা কেন লেখাপড়া করছে না। মা রোকেয়া বেগমের জবাব, ‘ওরা লেখাপড়া করলে সাগরে মাছ ধরাতে আমাদের কে সহায়তা করবে? আমাদেরতো এই মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।’ মাহবুব-রোকেয়াদের নৌকাও ছিল আরো ভেতরে। বাতাসের তীব্রতায় চলে এসেছেন নদীতে। রোকেয়া জানান, ‘ছিলাম নৌকা নিয়ে বগার চরের কাছে আরো নামায়। কিন্তু প্রবল বাতাসের কারণে এখানে চলে এসেছি।’ এই জেলে পরিবারের ছোট ছেলে আসিফের গায়ে জামা থাকলেও পরনে কোনো প্যান্ট নেই। নৌকার এ দিক থেকে ওদিকে ছোটাছুটি করে। বয়স আড়াই বা তিন হবে। পরিবারের সাথে নদী-সাগরে থাকতে গিয়ে তার জীবনটা হুমকির মুখে। মা রোকেয়া জানান, এই ছেলে তিনবার পানিতে পড়ে গিয়েছে। ভাগ্য ভালো আমরা দেখে ফেলায় ওর বাবা সাথে সাথে পানিতে লাফিয়ে পড়ে উদ্ধার করেছে।’ এই কথাগুলো বলার সময়ই তিনি অন্য দুই ছেলেকে বারবার সতর্ক করছিলেন, ‘ওর দিকে খেয়াল রাখিস। ও কিন্তু আবার পানিতে পড়ে যাবে।’ একটু আগেই অন্য নৌকায় থাকা আসমা কোনো মতে নিজেকে সামলিয়েছেন পানিতে পড়া থেকে।


শুধু আর্থিক অনটনের কারণে তাদের পক্ষে মাছ ধরার জন্য ভাগিজুগি (শ্রমিক/ মাল্লা) নেয়া সম্ভব হয় না। জেলে শহীদ জানান, ‘একজন ভাগিজুগিকে রাখতে গেলে দিনে তাকে হাজার-বারোশত টাকা দেয়া লাগে। এত টাকা কোথায় পাব। দিনেতো বড়জোর ৭০০-৮০০ টাকার মাছ ধরতে পারি। আজতো দেখছেনই মাছ একেবারেই কম। তাই পরিবার নিয়েই সাগরে আসি।’ তার মেয়ে রেশমার লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ। শহীদ তথ্য দিলেন, ‘ওতো মাছ ধরতে আসতেই চায় না। স্কুলে যেতে চায়।’ তবে মাহাবুরের ছেলে সাকিবের ইচ্ছে নেই স্কুলে যাওয়ার। আসলে সে তো লেখাপড়া করা এবং স্কুলে যাওয়ার মাজাটা পায়নি রেশমার মতো। কোনো দিনই স্কুলে পা দেয়নি।
সেই ছোটবেলা থেকেই সাগরে মাছ ধরেন শহীদ-মাহবুবরা। এই পেশায় তাদের বহুবার ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছে। ডাকাতও ধরেছে। শহীদ জানান, ‘আমি বেশ কয়েকবার ঝড়ের কবলে পড়েছি। ডাকাতির শিকার হয়েছি। ডাকাত আমার সব নিয়ে গেছে। জাল, মাছ, জামা কাপড় সব।’
সাগর ও নদীর মোহানার সব নৌকায় সোলার লাগানো। এটা তাদের রাতে বাতি জ্বলাতে সহায়তা করে। ১২ হাজার টাকা দিয়ে এই সোলার কিনেছেন শহীদ। নৌকাটি অবশ্য নিজের। মাহবুব নৌকা কিনেছেন ৭০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে। এ জন্য তাকে মাসে ২ হাজার টাকা দিতে হয় অর্থ দাতাকে।
দুই জেলে পরিবারই থাকেন পটুয়াখালীর চর মোন্তাজের লঞ্চ ঘাটের কাছে। সরকার এই মান্তা পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য দুই রুমের বাসা। ৫০টি পরিবার থাকে এখানে। জানান, জেলে শহীদ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মোস্তাফিজের বিকল্প ভাবছে চেন্নাই, দলে ভিড়িয়েছে এক ইংলিশ পেসার বিদেশ যাওয়া হলো না আশরাফুলের, বাসচাপায় মামাসহ নিহত ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য : সেনাপ্রধান ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ১ হাজার টাকার জন্য পেশাদার ছিনতাইকারীরা খুন করে ভ্যানচালক হারুনকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় : মতিউর রহমান আকন্দ টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে?

সকল