২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন

প্রতীক পেয়েই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা

লতিফুর রহমান মিলনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার
-

প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হলো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পেয়ে এই নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে শুরু করেছে প্রচারণা। নির্বাচন কমিশন বলছে আচরণবিধি না জানা হলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রথমে মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন। পরে তিনি সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন। বেলা সাড়ে ১০টায় প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নেতাকর্মীদের নিয়ে কারামাতিয়া মসজিদে শোকরানা নামাজ পরেন। পরে যান পল্লীনিবাসে মরহুম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মাজার জেয়ারত করেন। সেখানে সুরা ফাতেহা পাঠের পর মুনাজাতে অংশ নেন প্রার্থী মোস্তফাসহ সমর্থক ও নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালে শ্রদ্ধা জানান।
পরে দুই প্রার্থীই সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার উপস্থাপন করেন। জাতীয় পার্টির খামার মোড়স্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ইশতেহার উপস্থাপন করেন লাঙল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি এবং সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আহ্বায়ক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্যসচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর সহসভাপতি লোকমান হোসেন ও জাহিদুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি জাতীয় পার্টিও প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যেই আমি জন মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। সে কারণে আমি মনে করি আগামী ২৭ তারিখে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আমার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ ইনশাআল্লাহ।
অন্য দিকে তিনি শ্যামাসুন্দরী খালকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রথম এজেন্ডা হিসেবে রেখে ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন। এটা রংপুরের মানুষের একটা বড় দাবি। জনমতের দাবির ভিত্তিতে এটা আমি প্রথম এজেন্ডা হিসেবে আমার ইশতেহারে রেখেছি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ৩১টি এজেন্ডা আমি দিয়েছি। সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য যে যে দাবি উত্থাপন হওয়া দরকার আমি সেসব সন্নিবেশন করে ইশতেহারে এজেন্ডা হিসেবে দিয়েছি। আমি আশা করি আমার ইশতেহার যখন জনগণের কাছে যাবে, তখন জনগণের মতামতের সাথে আমার ইশতেহারের মিল থাকবে।
অন্য দিকে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সহসভাপতি আবুল কাশেম, দিলশাদ ইসলাম মুকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশিদ, উপ-দফতর সম্পাদক আবু সাদাত শাওনসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ডালিয়া বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরবাসীকে ভালোবাসেন। কখনই রংপুর সদর আসনে নৌকা মার্কা বিজয়ী হয়নি। তারপরেও রংপুরের মানুষের কথা, ভেবে তিনি রংপুরকে বিভাগ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশন করেছেন। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ দিয়েছেন। ছয়টি থানা দিয়েছেন। তিনি হাইটেক পার্ক দিয়েছেন। সেখানে ২০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ১ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে। ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে মানুষ আর ভুল করবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে এবং রংপুরের উন্নয়ন তরান্বিত করবে।
এ সময় ২৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ডালিয়া বলেন, শ্যামা সুন্দরী খাল ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। এটাকে আমি রক্ষা করতে চাই। যে স্কুল-কলেজগুলো আছে তা পর্যাপ্ত নয়। আরো সরকারি স্কুল-কলেজ করার চেষ্টা করব। কয়েকটি হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করব। রংপুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষক কেন্দ্র প্রয়োজন। সেসব আমি করার চেষ্টা করব। ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এবং গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যাপারে চেষ্টা করব আমি।
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে কোতয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি লতিফুর রহমান, মেহেদী হাসান বনি এবং জাসদের শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের খোরশেদ আলম মেয়র পদে লড়বেন। আর সংরক্ষিত কাউন্সিলরে ৬৭ এবং সাধারণ কাউন্সিলরে ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২৭ ডিসেম্বর হবে ভোট।
মিলনকে বহিষ্কার : এ দিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় কোতয়ালি থানার সহ সভাপতি লতিফুর রহমান মিলনকে বহিষ্কার করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরমও তোলেননি এবং প্রচারণায় আওয়ামী লীগের ব্যানারও ব্যবহার করেননি।
এ দিকে প্রতীক বরাদ্দের পাশাপাশি প্রচারণায় আচরণবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, আমার প্রার্থীদের বলেছি নির্বাচনী আচরণবিধি এবং আইনবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে হবে।
আমরা তাদের বলেছি ২টার ১ মিনিট আগে এবং রাত ৮টা ১ মিনিট পরে প্রচারণা করতে পারবেন না। নির্ধারিত সংখ্যার বেশি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না। প্রতিটি ক্যাম্পে অনুমতিপত্র রাখতে হবে। যদি অনুমতিপত্র না পাওয়া যায় তাহলে ক্যাম্প ভেঙে দেয়া হবে এবং প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে সুনির্দিষ্টভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। কেউ কোনোভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্র আরো জানিয়েছে, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। এবার সংখ্যা হয়েছে ২২৯টি। এ ছাড়াও এবার স্থায়ী ভোট কক্ষ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ আছে ১৯৩টি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় ৩২ হাজার ৫৭৫ জন ভোটার বেড়ে এবার ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং মহিলা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।


আরো সংবাদ



premium cement