১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা

নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে সরকার

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডিইউজের বিক্ষোভ সমাবেশ : নয়া দিগন্ত -

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, সরকার দেশে নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। কথায় কথায় মানুষ খুন-গুম এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বলতে কিছুই নেই। সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।


জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের উদ্যোগে গতকাল এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। আরো বক্তৃতা করেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, ডিইউজের সহসভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল ও রাশিদুল হক প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু ও সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়তে শুরু করেছে। বিরোধীদের মোকাবেলায় রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে তারা এক ধরনের আত্মঘাতী পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করছে। তাই ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করতে হবে।


নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর পুলিশি হামলা, গণগ্রেফতার, গুলি করে হত্যা এবং সভাসমাবেশে বাধা প্রদান সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকার গণ আন্দোলন দমাতে হত্যার মহোৎসব শুরু করেছে। ডিসেম্বরেই এ অবৈধ সরকারের পতন হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিসেম্বর মাসে হানাদার পতন করেছিলাম। এই ডিসেম্বর মাসেই স্বৈরাচারী এরশাদের পতন করেছিলাম। এই ডিসেম্বরেই পেশাজীবী পরিষদ এবং সাধারণ জনগণকে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনার যেভাবে কথা বলেছেন ইতঃপূর্বে কোনো পুলিশকে এভাবে কথা বলতে দেখিনি। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য শুনলে মনে হয় সরকারি অফিসার নয়, আওয়ামী লীগের কোনো ক্যাডার বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক পেশাজীবীরা কেউই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশের বাড়াবাড়ি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। বর্তমানে দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন খেলা হবে; বুধবার সেই খেলা আপনারা দেখিয়েছেন। এ খেলার জন্য এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে বিদায় করবে। পেশাজীবী এবং জনগণ একসাথে ঐক্য করে এ সরকারের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হবে। সরকারের পতন নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।


শওকত মাহমুদ বলেন, এ সরকার সাংবাদিকদের শত্রু। এখন আন্দোলনের চূড়ান্ত সময় এসেছে। জালিম সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকে বলব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিন। আমরা জানি এ সরকারের কাছে বলে লাভ নেই। সরকারের পতন ছাড়া সাংবাদিকদের মুক্তি নেই। আপনারা প্রস্তুত হন সরকারের পতনের পরই আমরা আমাদের বিজয় উদযাপন করতে পারব।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, এ সরকার দাবি মানবে না, দাবি আমাদেরকে আদায় করে নিতে হবে। তিনি বলেন, ইতঃপূর্বে মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল সেইভাবে রাস্তায় নামতে হবে। যারা রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের সাথে অঙ্গীকার করে আমরা রাস্তায় নামব। রাজপথে যে রক্ত ঝরছে তার প্রতিশোধ হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। একসাথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তবেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটবে।


এম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের ওপর হামলা করে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করছে। গত ১৪ বছরে ৫০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছে। সরকার এখন মরণকামড় দিচ্ছে। বুধবার সংবাদকর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রক্ষা করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হাত দিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। আপনাকে নিকৃষ্ট স্বৈরাচারের পরিণতি বরণ করতে হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। জনগণ মনে করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনই হচ্ছে মুক্তির একমাত্র পথ। জনগণের এ আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে এ সমাবেশ থেকে আমরাও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। একই সাথে সব পেশাজীবীসহ দেশবাসীকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement