২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রুশ বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা

-

-ইউক্রেনের সামরিক সম্ভাবনা গুঁড়িয়ে দেয়াই রাশিয়ার লক্ষ্য
-জাপোরিজ্জিয়ায় ইউক্রেনের গোলাবর্ষণ অব্যাহত
-লাটভিয়ায় রাশিয়ার সর্বশেষ স্বাধীন টিভি চ্যানেল বন্ধ

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার কার্স্ক অঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়েছে। মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেনীয় বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে। অন্য দিকে কিয়েভের অভিযোগ, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সোমবারের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেন বিদ্যুৎ গ্রিড স্থিতিশীল করতে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসির।


কার্স্কে ড্রোন হামলার পর তেল সংরক্ষণাগারে আগুন লেগে যায়। স্থানীয় গভর্নর রোমান স্তারোভায়ত গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি। তবে দ্রুত সন্ত্রাসবিরোধী কমিশন বৈঠক করছে। কার্স্ক শহরটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ ভূখণ্ডের গভীরে দু’টি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন দুঃসাহসী ড্রোন চালানোর পর মঙ্গলবার কার্স্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে স্তারোভায়ত বলেন, ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্থানীয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে বিশাল বিস্ফোরণের পর রাতের আকাশে আগুনের শিখা দেখা যায়। পরে ওই এলাকা থেকে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।


এ ঘটনা নিয়ে কিয়েভ বা মস্কোর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। গত সোমবারের হামলার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ সোভিয়েত যুগের তৈরি বিশেষায়িত ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ করে। সম্প্রতি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা বেড়েছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার অভ্যন্তরেও যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেন, ইউক্রেন জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকি তৈরি হয়েছে। সোমবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনের ড্রোন রায়াজান ও সারাতোভ এলাকায় আঘাত হানায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। এতে দু’টি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো আক্রমণের দায় স্বীকার করা হয়নি। ইউক্রেনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার আঘাত হানা ড্রোনগুলো ইউক্রেন থেকে পাঠানো। ইসরাইলের প্রতিষ্ঠান ইমেজস্যাটের ছবিতে ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিমানঘাঁটির ছবি প্রকাশ করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবারের ওই আক্রমণ সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ হামলায় দূরপাল্লার জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্য ছিল। নিচু দিয়ে উড়তে সক্ষম এমন ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষক সেরহি জুরেটস বলেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের হামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে।


ইউক্রেনের সামরিক সম্ভাবনা গুঁড়িয়ে দেয়াই রাশিয়ার লক্ষ্য
ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রুশ হামলার লক্ষ্য হলো দেশটির ‘সামরিক সম্ভাবনা’ গুঁড়িয়ে দেয়া। এমন মন্তব্য করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে বুধবার এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা। সের্গেই শোইগু বলেন, ইউক্রেনের সামরিক কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা শিল্প উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনী। দেশটির সামরিক সম্ভাবনাকে চূর্ণ করে দিতেই দূরপাল্লার নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। রুশ বাহিনী ডনবাসের বিভিন্ন এলাকা ‘মুক্ত’ করা অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান সের্গেই শোইগু। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনী ডনবাসকে মুক্ত করে চলেছে। সম্প্রতি মায়োর্স্ক, পাভলোভকা, অপিটনয়ে, আন্দ্রেভকা, বেলোগোরোভকা ইউঝনায়া এবং কুর্দিউমোভকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’


জাপোরিজ্জিয়ায় ইউক্রেনের গোলাবর্ষণ অব্যাহত
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় অব্যাহত গোলাবর্ষণের অভিযোগ করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এমন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, অঞ্চলটিতে অব্যাহত গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকি তৈরি করছে কিয়েভ। তিনি বলেন, কিয়েভের ‘পারমাণবিক সন্ত্রাস’ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সুরক্ষা নিশ্চিতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে রুশ বাহিনী। গত অক্টোবরে জাপোরিজ্জিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলের বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করছে রোসাটম। সেখানে কর্মরত ইউক্রেনীয় কর্মীদের রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।


লাটভিয়ায় রাশিয়ার সর্বশেষ স্বাধীন টিভি চ্যানেল বন্ধ
এ দিকে ইউক্রেনে রুশ হামলার পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগে লাটভিয়ায় রাশিয়ার সর্বশেষ স্বাধীন টেলিভিশন চ্যানেল ‘টিভি রেইন’ এর সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে রাশিয়ায় টিভি রেইন এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। পুতিন ও তার সরকারের সমালোচনা করায় সেটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হলে ২০২২ সাল থেকে টিভি চ্যানেলটি লাটভিয়া থেকে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু পাঁচ মাসের মাথায় সে দেশেও টিভি চ্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে টিভি রেইনের সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে লাটভিয়ার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে টিভি রেইন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছে। তবে টিভি চ্যানেলটি বলেছে, তারা লাটভিয়া সরকারের নির্দেশ মেনে সম্প্রচার বন্ধ রাখবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement