২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন কমেছে সূচকও

-

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সাথে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন কমে ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা আরো প্রকট হলো। তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোরপ্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে থাকায় এ লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নানা ইস্যুতে কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে। এ দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোরপ্রাইস বেঁধে দিয়েছে। ফ্লোরপ্রাইসের নিচে দাম কমার সুযোগ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের শেয়ার বা ইউনিটের লেনদেন হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত লেনদেন কমছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি বড় হয়েছে দাম কমার তালিকা। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে, তার প্রায় তিনগুণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে দাম কমার তালিকায়। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি রয়েছে।
দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোরপ্রাইসে আটকে রয়েছে। ফ্লোরপ্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে তারা ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না।


এ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দরপতনের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ পয়েন্ট বাড়লেও ১৫ মিনিটের মধ্যে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষদিকে দরপতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ফলে সবকটি সূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। সেই সাথে বড় হয় দরপতনের তালিকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির। আর ২১৪টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় চলে গেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের ডিএসইতে এত কম লেনদেন আর দেখা যায়নি।


পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন চিত্র দেখে মনে হচ্ছে শেয়ারবাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে গেছে। নানা ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এমনিতেই বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তাপ হবে কি না তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও শঙ্কিত। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান এখন ফ্লোরপ্রাইসে আটকে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। সবকিছু মিলেই শেয়ারবাজরে লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, জীবন বীমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ই- জেনারেশন, নাভানা ফার্মা ইস্টার্ন হাউজিং এবং অলেম্পিক।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ছয় কোটি ৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫টির এবং ৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement