২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

-

নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সাথে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের বৈঠকের পরে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের উপস্থিতিতে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।


সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটি, শিপিং করপোরেশন, নৌযান মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বৈঠকে মালিক শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো দেখছি। এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে কমিটি করেছি। আর এই এক মাস শ্রমিকদের অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা প্রদানের জন্য মালিকপক্ষকে বলেছি।
তিনি বলেন, এর মধ্যে মাঝখানের একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা করেছে। কয়েক জায়গায় হামলা হয়েছে। গ্রেফতার ও মামলা হয়েছে। সেটাও আমরা দেখব। সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তাতে আমরা সহযোগিতা করব বলে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছি। মন্নুজান সুফিয়ান আরো বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের সাথে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে মিলে এসব দাবি নিরসনে একটি কমিটি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হবে। ত্রিপক্ষীয়ভাবে আমরা কাজ করব।


বৈঠকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: শাহ আলম কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা ১০ দাবি নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছি। আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সভা হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরিকাঠামো নির্ধারণে এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠন ও মামলা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করি দ্রুত সেগুলো ব্যস্তবায়ন হবে।
শাহ আলম বলেন, এই মুহূর্ত থেকে সব শ্রমিককে কাজে ফিরতে আহ্বান করছি। যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকদেরও যথাযথভাবে যাত্রী পারাপারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার দিনগত রাত থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। কর্মবিরতির কারণে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নৌযান শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে, বাল্কহেডের রাত্রীকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে, বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দরে পোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমানকার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে, বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে।


ভোলা প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও গত দু’দিন বন্ধ ছিল অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের লঞ্চ চলাচল। ফলে ধর্মঘটে সারা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল দ্বীপজেলা ভোলা। এতে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জনজীবন। ঘাটগুলোয় ছিল সুনসান নীরবতা।
নেই হকারদের হাঁক-ডাক, নেই কোলাহল। ঘাটেই নোঙর করা কয়েকটি লঞ্চ। শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কোন কোন যাত্রী ঘাটে এসে নৌযান না পেয়ে ফিরে গেছেন। কেউ আবার বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্ট করছেন। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ভোলার ইলিশা, ভেদুরিয়া থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার রুটের কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট থেকেও ছেড়ে যায়নি কোনো লঞ্চ। এসব ঘাটে অনেক যাত্রী আসলেও তারা গন্তব্যে যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত ফিরে গেছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন নারী ও শিশুরা।


বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সারা দেশের মতো বরগুনায়ও অনির্দিষ্টকালের নৌধর্মঘট ছিল গত দু’দিন। বরগুনা নদীবন্দর থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসাসহ জরুরি কাজে যাওয়া ঢাকাগামী যাত্রীরা। নি¤œ আয়ের যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বাসে যাওয়া আসা করতে হয়েছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবার নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলেছে। ফলে সকাল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দেশের একমাত্র কৃত্রিম চ্যানেল গাবখান থেকে কার্গো চলাচল বন্ধ ছিল। ধর্মঘটের নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা সড়কপথে গন্তব্যে চলে গেলেও মালামাল নিয়ে ছোট বড় কার্গো জাহাজ ভিড়েনি তীরে, যায়নি গাবখান চ্যানেল হয়ে ঢাকা, বরিশাল, বরগুনা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও মংলা বন্দরে।

 


আরো সংবাদ



premium cement