২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান

হাইকোর্টের রায় বহাল চেম্বারে
-

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে করা আবেদনের ওপর আগামী ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।এর আগে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না- এই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।


গত ২৩ নভেম্বর চেক ডিজঅনার মামলা সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো: আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে এ রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট নি¤œআদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একই সঙ্গে তাদেরকে ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।


একই সঙ্গে আপিলকারীর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। ঋণ হিসাবে নেয়া মোট টাকার ৫০ ভাগ আগামী ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে আদেশ দেন আদালত। প্রতিটা ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স করতে আইন প্রণয়নে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া হয় রায়ে।
আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনো দিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে নয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।


আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর আপিলের রায়ে এমন নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।


আরো সংবাদ



premium cement