২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিপর্যয়

মাস্টার্সের অর্থনীতিতে গণহারে ফেল ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার

উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো গাফিলতি হয়নি : পরীক্ষানিয়ন্ত্রক
-

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষার উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ফেল করা শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিষয়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও শুধু অর্থনীতিতে ফেল করায় মাস্টার্সের মোট পরীক্ষার্থীদের এই ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, অর্থনীতি একটি কঠিন ও জটিল সাবজেক্ট। বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিভাগ থেকে যেসব শিক্ষার্থী অর্থনীতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তাদেরই ফল খারাপ হয়েছে। আর পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণে কোনো গাফিলতি বা হেরফের হয়নি বলেও দাবি এই কর্মকর্তার।
মাস্টার্সের শেষ পর্বের পরীক্ষায় ফেল করা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অন্যান্য বিষয়ে পাস করলেও শুধু ব্যাষ্টিক অর্থনীতিতে ফেল করেছি আমরা। এমন রেকর্ড জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরল। তাদের অভিযোগ ২০১৯ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বে গণহারে ফেল করানো হয়েছে আমাদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সঠিকভাবে তাদের খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি।

রাজধানীর পাশের জেলার একটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র নয়া দিগন্তকে জানান, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন অনার্সে। কিন্তু ১০ বছরেও শেষ হয়নি আমার শিক্ষাজীবন। চাকরিতে আবেদনের বয়সও শেষের দিকে। আমার দু’চোখে এখন শুধুই অন্ধকার। এই ছাত্র আরো জানান, সর্বশেষ মাস্টার্সের রেজাল্টে ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ফেল এসেছে তার। যদিও অন্যসব বিষয়ে খুব ভালো রেজাল্ট আছে। পুনরায় তার খাতা মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত ২ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ পর্বের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। এতে অন্যান্য বিষয়ে গড় পাসের হার প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে মাত্র ২৮ শতাংশ পাস করেছে অর্থনীতি বিভাগে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছে ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্যান্য বিষয়ে রেজাল্ট ভালো হলেও শুধু ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ফেল। তাই হতবাক শিক্ষার্থীরা।

অর্থনীতিতে এমন ফল বিপর্যয়ের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান নয়া দিগন্তেকে জানান, অর্থনীতি একটি কঠিন ও জটিল বিষয়। এই সাবজেক্টটি মূলত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। তাই আর্টস বা কমার্স বিভাগ থেকে যেসব শিক্ষার্থী অর্থনীতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তারাই অধিকাংশ ফেল করেছেন। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো প্রকার গাফিলতি হয়নি বলেও দাবি তার।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মকর্তা আরো জানান, আমাদের কাছে যতটুকু সংবাদ এসেছে তাতে দেখা গেছে বরিশালের এক দু’টি কলেজের শিক্ষার্থীরা খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখেছি। আমরা যে ফল পেয়েছি তাতে খাতা সঠিকভাবেই মূল্যায়ণ করা হয়েছে। কঠিন এবং জটিল সাবজেক্ট হওয়ার কারণেই অর্থনীতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। কেননা অর্থনীতিতে ম্যাথমেটিক্যাল ও স্ট্যাটিস্টিক টার্ম বেশি থাকায় সব শিক্ষার্থী এ বিষয়টিতে সেভাবে পেরে উঠে না। ফলে ফেলের সংখ্যাই বেশি। তবে মাস্টার্সে ফেল করা বা শেষ পর্বের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা কত এমন তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিসংখ্যান না দেখে বলতে অপারগ বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

অন্যদিকে মাস্টার্সে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ অর্থাৎ শেসনজটের কারণে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো: মশিউর রহমান জানিয়েছেন, যারা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিল তাদের সবারই পড়াশুনা শেষ হয়েছে। কিন্তু যারা এখনো শেষ করতে পারেনি তারা নিশ্চয় আগে বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করে এসেছে। তা না হলে ১০ বছর লাগার কোনো কারণ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement