১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কচ্ছপের গতিতে কাজ, মাসে পরামর্শ খরচ ৭.১৬ লাখ টাকা

-


ভুটানে দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূত ভবন নির্মাণ
- সাড়ে ৪ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১ শতাংশ
-খরচ বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ


দেশের কিছু কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলছে কচ্ছপের গতিতে। সরকার অনুমোদন ও অর্থ ছাড় করলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না এমন অভিযোগ পরিকল্পনা কমিশনের। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নির্মাণকাজে সাড়ে ৪ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১ শতাংশ, যা সোয়া তিন বছরে শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে দ্বিগুণ। আর সময় সোয়া তিন বছরের জায়গায় এখন সোয়া চার বছর। মাসে জনপ্রতি পরামর্শক খরচ সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা বলে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হওয়ায় শুরু থেকেই ভুটানের সাথে বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ভুটান একমাত্র দেশ যার সাথে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। ভুটানে বাংলাদেশের ৯০টি পণ্যে এবং বাংলাদেশে ভুটানের ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চালু রয়েছে। এরপরও বাণিজ্য ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। ২০১৬ সালে ভুটান থেকে ২৩০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য। ভুটানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এই বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


২০১৭ ভুটানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক গতি লাভ করে। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হেলোতে ভুটানের রাজা, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তির মাধ্যমে ভুটান দূতাবাস নির্মাণের জন্য ৬৫,৩৪০ বর্গফুট বা ১.৫ একর জমি প্রদান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে থিম্পুর কূটনৈতিক এলাকায় বাংলাদেশ দূতাবাস নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এপ্রিল ২০১৮ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন পায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, অনুমোদনের চার বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। কাজের এই ধীরগতিতে সন্তুষ্ট নয় পরিকল্পনা কমিশন। নতুন করে ২১ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করে ৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বাস্তবায়নকাল জুন ২০২৫ পর্যন্ত অর্থাৎ অনুমোদিত মেয়াদকাল হতে দুই বছর বেশি নির্ধারণ করে প্রথমম সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজগুলো হলো, ৪২১০ বর্গমিটার বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন, অফিসার ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১ বর্গমিটার নির্মাণে খরচ পড়ছে ৮০ হাজার ৮০০ টাকা। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে চলতি ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার টাকার কম। বেশি ব্যয়ের বিষয়ে ভুটানের কাজের রেট শিডিউল চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।


প্রকল্পটির খরচ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৩৬ জন পরামর্শকের জন্য দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। যেখানে প্রতি মাসে পরামর্শকে ব্যয় হবে সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা। নতুন করে পরামর্শকের কাজে ৪৭ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে। তাই এই খাতে ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। পূর্ত কাজের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে যেমন- মূলধন অংশে চ্যান্সারি (দূতাবাস) কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ বাবদ ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা হতে সাত কোটি ৬৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৩৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বাবদ চার কোটি টাকার পরিবর্তে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অর্থাৎ ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন করে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে ভুটান দূতাবাস বলছে, প্রকল্পের প্রস্তাবিত নির্মাণ অঙ্গের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় দরপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর কোনো নির্মাণ কোম্পানির সাড়া না পেয়ে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা দুইবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরে দরপত্র দাখিল করা তিনটি কোম্পানির মধ্য থেকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দু’টি কোম্পানিকে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করে। কিন্তু তাদের উদ্ধৃত মূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩৪ ও ১৬ শতাংশ বেশি হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি পুনরায় দরপত্রের সুপারিশ করে। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, আমরা বেশি ব্যয়ের বিষয়ে পিইসি সভায় জানতে চাইবো। তাদেরকে ভুটানের রেট শিডিউল দিতে বলেছি। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement