২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ

অনশনের ঘোষণা দিয়েও করল না বহিষ্কৃতরা

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃতদের সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

দুইপক্ষের মারামারির ঘটনায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত এবং একই সাথে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যানের দাবিতে অনশনের ঘোষণা দিলেও পরে তা না করেই ফেরত যান বহিষ্কৃত ওই নেত্রীরা।
গত রোববার দিনগত রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি স্থগিত ও ১৬ নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ দেয়ার পর গতকাল সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে অনশনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী লিখিত বক্তব্যে বলেন, কী অন্যায় আমাদের? আমাদের অপরাধ আমরা নির্যাতিত সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছি। ইডেন কলেজের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগের হাজার হাজার প্রমাণ রয়েছে। তাদের চাঁদাবাজির ভিডিও রয়েছে, অধ্যক্ষ-ম্যামদের নিয়ে কটূক্তি করলেও তাদের কেন বহিষ্কার করা হলো না।
তারা বলেন, দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে সেখান থেকে একজন নেত্রী পদত্যাগের পরও নতুন করে কমিটি না করে কোন তদন্তের ভিত্তিতে এই প্রেস রিলিজ দেয়া হলো। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সভাপতিকে মারধরের। আমরা তো আগে সংঘর্ষ বাধাইনি। দুই পক্ষই সংঘর্ষ করেছে। তাহলে একপক্ষকে কেন বহিষ্কার করা হলো?
এ সময় আগের একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, আমরা বলতে চাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশী রোকেয়া হলের এজিএস ফাল্গুনীকে মারধর করলে তাকে কেন বহিষ্কার করা হলো না? তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান, অথচ সেই মামলার আসামিকে ইডেন কলেজে দায়িত্বপ্রাপ্ত করা হয়েছে এবং প্রত্যেক তদন্ত কমিটিতে তাকেই রাখা হয়।
এ সময় তারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন এবং দুপুর ১২টায় অনশনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে ঘোষিত কর্মসূচি পালন না করেই ফিরে আসেন তারা। এর আগে সেখানে যাওয়ার পর ফটকে নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে তাদের কয়েক দফা ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন তারা।
অনশনের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা অনশন বাতিল করেছি। এখন আমাদের নতুন কোনো কর্মসূচি নেই।
তবে কেন অনশন বাতিল করা হলো, কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কে ছিলেন, এসব বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। তারা দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন।
পরে বহিষ্কার হওয়া সিনিয়র সহসভাপতি সোনালী আক্তার বলেন, আমরা পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল আওয়াল শামীম এসে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলেছেন। বহিষ্কারাদেশ বাতিল করার বিষয়ে তারা আশ্বস্ত করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে আমাদের নাম লিখে রাখা হয়। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে চলে আসি।
বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা : এ দিকে ইডেন কলেজের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদলের ইডেন মহিলা কলেজ শাখা। রোববার রাতে কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেহানা আক্তার শিরিন ও সদস্যসচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ ছাড়াও শিক্ষা সন্ত্রাসীদের ছাত্রত্ব বাতিল ও অধ্যক্ষকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)। সংগঠনটির সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো: মাহফুজুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে জঘন্য আচরণে লিপ্ত শিক্ষা সন্ত্রাসীদের ছাত্রত্ব বাতিল করে আইনের আওতায় আনা, পাশাপাশি আত্মমর্যাদাহীন ও সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি অধ্যক্ষকে অনতিবিলম্বে অপসারণ করা এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
এ ছাড়াও হামলার ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সিট বাণিজ্য বন্ধে সবগুলো প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement