স্বর্ণ চোরাচালানে দেশ থেকে বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে
বাজুসের সংবাদ সম্মেলন- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
স্বর্ণের অলঙ্কার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বছরে আনুমানিক ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পের বাজারে অস্থিরতা, চলমান সঙ্কট ও সমস্যা, দেশী-বিদেশী চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধ এবং কাস্টমসসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানের দাবিতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।
এতে লিখিত বক্তব্য দেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল-এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন। তিনি বলেন, বাজুসের প্রাথমিক ধারণা-প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের অলঙ্কার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে, যা ৩৬৫ দিন বা বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। স্বর্ণ পাচার হওয়ায় বড় অঙ্কের ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের ডলার সঙ্কটের এটা অন্যতম কারণ। দেশে চলমান ডলার সঙ্কটে এই ৭৩ হাজার কোটি টাকার অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি করেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
এ ক্ষেত্রে বাজুসের প্রস্তাব হলো, স্বর্ণ চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। পাশাপাশি চোরাকারবারিদের দমনে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরো কঠোর আইন করতে হবে। এ ছাড়াও ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার এবং গয়না আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সঙ্কট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব করছি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এই চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশে স্বর্ণ পাচারের সাথে জড়িত। দেশে চলমান ডলার সঙ্কট ও অর্থপাচারের সাথে স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেটগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করে বাজুস। এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বর্ণের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা, পাশাপাশি চোরাকারবারিদের দমনে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরো কঠোর আইন করা, ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার ও গয়না আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সঙ্কট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে সমীক্ষা পরিচালনার করা ও চোরাচালানে জব্দ স্বর্ণের ২৫ শতাংশ পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া গয়নার মান উন্নয়নে হলমার্ক নীতিমালা ও ডায়মন্ড নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছে বাজুস। এ বিষয় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট। হলমার্ক ছাড়া কোনো অলঙ্কার বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে হলমার্ককৃত অলঙ্কার নিম্নমানের পাওয়া যায় তাহলে যে প্রতিষ্ঠান অলঙ্কার হলমার্ক করেছে সে প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করবে বাজুস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশে স্বর্ণের চারটি মান রয়েছে, যথাক্রমে ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ (১৯ দশমিক ৫)। এই মানের নিচে কোনো স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করা যাবে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তেজাবি (পাকা বা পিউর গোল্ড) স্বর্ণের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই ৯৯ দশমিক ৫ এর নিচে মান গ্রহণযোগ্য না। এক্ষেত্রে হলমার্কিং কোম্পানিগুলোকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ পরীক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাজুসের ভাইস চেয়ারম্যান বিধান মালাকার, সদস্যসচিব ইকবাল উদ্দিন, সদস্য স্বপন চন্দ্র কর্মকার, বিকাশ ঘোষ, নজরুল ইসলাম ও বাবুল রহমান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা