২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙন : নয়া দিগন্ত -

পূর্ণিমা জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সকালে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব এবং পূর্ণিমা জোয়ারের কারণে তিন দিন ধরে সমুদ্র উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈকতে বিশাল আকৃতির ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ছে। গত তিন দিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ১০টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর ও কলাতলী পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানিতে সৈকতে পর্যটকদের জন্য রাখা চেয়ারের জায়গা ডুবে বিভিন্ন মার্কেটের কাছাকাছি চলে এসেছে।
জোয়ারের পানিতে এভাবে সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় সৈকতে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক এবং স্থানীয়দের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সাথে ঝুঁকিতে পড়েছে সৈকতপাড়ের পাঁচ শতাধিক দোকান। সাগর উত্তাল, উচ্চ জোয়ারে একের পর এক ঢেউ আঘাত করছে উপকূলের বালিয়াড়িতে। একই সাথে ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে গেল ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্স। আর ভেঙে যাচ্ছে বালিয়াড়ি এবং তলিয়ে যাচ্ছে জিও ব্যাগও। কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত অব্যাহত রয়েছে; যার প্রভাবে জোয়ার এলেই ঢেউয়ের আঘাতে তছনছ হচ্ছে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট। একই সাথে উচ্চ জোয়ার এলেই আতঙ্কে থাকেন সৈকতপাড়ের দোকানিরা।


লাবনী পয়েন্টের বিচ মার্কেটের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, আমাদের বিচ মার্কেটের দুই শতাধিক আচার, শুঁটকি ও বার্মিজ পণ্যের দোকান রয়েছে। এখন সব দোকান ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ঢেউয়ের আঘাত আসবে এই ভয়ে রয়েছি। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সাগরের আগ্রাসন বাড়ছে। তবে এ বছর এর মাত্রা আরো বেড়েছে। তাই সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে টেকসই বাঁধ দেয়ার দাবি জানালেন পরিবেশবাদীরা।
বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, ভাঙনে তীব্রতা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে সৈকতের পাড় বা ঝাউবিথী রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই দ্রুত সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে টেকসই বাঁধ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রেজাউল করিম জানান, ‘সাগর উত্তাল থাকার কারণে পর্যটকদের পানিতে নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সচেতনতা অবলম্বনের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সৈকতের ভাঙন পরিদর্শন করেন সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট ও কবিতা চত্বর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, পূর্ণিমা জোয়ারের কারণে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সৈকতের ভাঙন রোধে স্থায়ী একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েক দিনের এই ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও টিউব দিয়ে কক্সবাজার সৈকতকে রক্ষার কাজ শুরু করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে সৈকতের যেসব পয়েন্টে বেশি ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement