১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারী চিকিৎসককে গলা কেটে হত্যা

একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় জান্নাত খুন

-

নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের গলাকেটে হত্যা করেছে তারই স্বামী রেজাউল করিম রেজা। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল করিম র‌্যাবকে এ কথা জানিয়েছে। চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের সাথে ২০১৯ সালে সামাজিকমাধ্যমে পরিচয় হয় রেজাউল করিম রেজার। পরিচয়ের সূত্রে প্রেম। এরপর ২০২০ সালের অক্টোবরে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন তারা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একাধিক নারীর সাথে রেজার সম্পর্কের জেরে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে অবিশ্বাস জন্ম নেয়। এসব কারণে নারী চিকিৎসককে আবাসিক হোটেলে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গতকাল ১২ আগস্ট ওই নারী চিকিৎসকের জন্মদিন ছিল। তার জন্মদিন উদযাপন করতে এ দিন সন্ধ্যায় কোনো রেস্তোরাঁয় বর্ণাঢ্যভাবে আয়োজন করার আশ্বাস দিয়ে জান্নাতুলকে ডেকে নেয়া হয় ওই আবাসিক হোটেলে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামে ওই হোটেলটির চারতলার ৩০৫ নম্বর কক্ষে উঠেন তারা। এরপর সকাল ১০টার দিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় নারী চিকিৎসককে।


জানা গেছে, গত বুধবার মধ্য রাতে খবর পেয়ে ওই আসাসিক হোটেল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপর থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে রেজাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী চিকিৎসকের সাথে রেজার পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং অক্টোবর ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। ভিকটিমের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন গ্রেফতারকৃত রেজাউলের একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল। এই বিষয়টি ভিকটিম জান্নাতুল জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায় রেজাউল তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জান্নাতুলকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে জান্নাতুলকে হত্যার জন্য তার ব্যাগে ধারালো চাকু নিয়ে যায়।


র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পর জান্নাতুলের সাথে রেজার বিভিন্ন নারীর সম্পর্ক নিয়ে কথাকাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় রেজা তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে জান্নাতুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর সে গোসল করে, যাতে হত্যার কোনো আলামত তার শরীরে দেখা না যায়। পরে জান্নাতুলের মোবাইল ফোন নিয়ে রেজা বাইরে চলে যায়। যাওয়ার সময় সে রুম বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে যায়।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, রেজা হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যায়। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষতস্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে র‌্যাবের অভিযানে সে গ্রেফতার হয়।
র‌্যাব জানায়, রেজা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাস করে। এমবিএ চলাকালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে যোগ দেন। চলতি বছরের জুন মাসে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন।
নিন্দা ড্যাবের : নারী চিকিৎসক ডা: জান্নাতুন নাঈম সিদ্দিক হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা: মো: আব্দুস সালাম এক বিবৃতিতে বলেন, ক্রমাগত এ দেশে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতোপূর্বেও ছিনতাইকারীদের হাতে একজন দন্ত চিকিৎসক নিহত হওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক নিগৃহীত হয়েছেন।
তারা বলেন, কর্মক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা নিরাপদ নয়, প্রতিদিন কোনো না কোনো হাসপাতালে চিকিৎসককে নাজেহাল করা হচ্ছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন। এমনকি বিএমএ এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকে সরকারের লেজুরবৃত্তি করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
চিকিৎসক নেতারা উপরোক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন এবং চিকিৎসকসহ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানেরও আহ্বান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement