১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলা ও নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভোলায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এলাকা : নয়া দিগন্ত -

পূর্ণিমার প্রভাবে কয়েক দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলা ও নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার নিম্নাঞ্চল এবং বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২৫ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে চরফ্যাসন উপজেলার ঢালচর, চরনিজাম, মুজিবনগর, মনপুরার কাজিরচর এবং মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার শত শত একর জমির ফসল ও পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। ভুক্তভোগী জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমন চরম দুর্ভোগের সময়ে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধি কাউকে তারা পাশে পাননি।
মনপুরার কাজিরচরের বাসিন্দা মো: সিরাজ মিয়া জানান, জোয়ারের পানিতে সব ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। অন্তত ২০টি পুকুরের কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তার নিজেরও তিনটি পুকুরের প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। বহু ঘরের ভিটে পানিতে ধুয়ে গেছে।
চর নিজামের আলম ফরাজী জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আরো বেশি পানি উঠেছে। এতে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢালচরের ব্যবসায়ী ইসরাফিল হাওলাদার বলেছেন, ঢালচরের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। পানি উঠে আবার নেমে গেলেও লবণাক্ততার সৃষ্টি হওয়ায় জমির উর্বরতা কমে গেছে। ভবিষ্যতে এসব এলাকায় ফসল হবে না বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।


ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। শত শত মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব মানুষের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার দাবি করছেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন, ওই সমস্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তা ছাড়া পানির উচ্চতা ও চাপ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় এসব অঞ্চলের মানুষকে অস্বাভাবিক জোয়ার থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে শুরু হওয়া জোয়ারে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের প্রভাবে নিঝুমদ্বীপের বেড়িবাঁধ না থাকায় হুহু করে পানি ঢুকে পড়ে।
জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে হাতিয়ায় নিঝুমদ্বীপে তিন থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ উদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুম দ্বীপ। জোয়ারে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো: নুরুল আলম বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতায় পানি উঠেছে। আগামী দুই দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement