২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে : অর্থমন্ত্রী

চীনের বিআরআই ঋণ নিয়ে সতর্ক করলেন মন্ত্রী
-

মূল্যস্ফীতি বেশ কয়েক মাস ধরে যখন ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে, কোনো ধরনের চালই যখন ৫৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না, কাঁচামরিচের কেজি যখন ২০০ টাকা ছুঁই ছুঁই, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই যখন লাগামহীন, কৃষক ও গরিবের জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত ডিজেল ও কেরোসিনসহ সব ধরনের তেলের দাম যখন গড়ে ৫০ ভাগের ওপরে বাড়ানো হলো, এর ফলে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের অবস্থা যখন চিঁড়ে চ্যাপ্টা- ঠিক তখনই অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, গরিব মানুষের জন্য সরকার অনেক কিছুই করেছে, এই সরকার গরিব মানুষের জন্য। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বীকার করেছেন, ‘জ্বালানির সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জ্বালানির দাম বাড়লে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। তার প্রভাব সার্বিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার ওপরে পড়বে। অর্থাৎ দাম বাড়লে, খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।’ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দফতরে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেছেন।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গত এপ্রিল, মে ও জুনে দেশের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়। জুলাইয়েও মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই মূল্যস্ফীতি আগের চেয়েও বেড়ে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে। এই বেড়ে যাওয়ার হার ১০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানির সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জ্বালানির দাম বাড়লে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। তার প্রভাব সার্বিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার ওপরে পড়বে। অর্থাৎ দাম বাড়লে, খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।
এ পরিস্থিতিতে গরিব মানুষ কষ্টে আছে, তাদের এই কষ্ট লাঘবে সরকার কী করবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবার জন্যই সরকার। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গরিব মানুষের কষ্ট অনেক বেশি হয়। ইতোমধ্যে তাদের কষ্ট লাঘবে সরকার ওএমএস, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তবে নতুন করে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থেকে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে আরো কী সহায়তা দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সঙ্কট। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের দেশে দেশে বাড়ছে ডলারের দাম। যারা যুদ্ধ করছে তাদেরও বাড়ছে, যারা যুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন তাদেরও বাড়ছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব আছে। তবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। শিগগিরই ডলারের দাম স্বাভাবিক হবে।


শিগগিরই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থনীতিতে সার্বিক ক্ষতির প্রভাব কেমন হবে তার কোনো অ্যাসেসমেন্ট করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের মতো করে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এখন দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পণ্যমূল্য বাড়ছে। যার প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রা ও উৎপাদনমুখী সব কর্মকাণ্ডে। এখন এই প্রভাব কতটা প্রকট হতে পারে বা কতটা সহনীয় থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চয়ই অর্থ মন্ত্রণালয় একটা প্রভাব খতিয়ে দেখবে।
একই সাথে অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এই পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের বাজারে অস্থিরতার সময় দেশী-বিদেশী ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, কোনো কিছুই নিয়মের বাইরে হওয়া উচিত নয়। ব্যাংক চলে নিয়মের মধ্যে। নিয়মেই বলা আছে কী পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে, কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা যাবে, আরো কী করতে হবে সেটিও বলা আছে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তি পেতে তো হবেই।
চীনের বিআরআই ঋণ নিয়ে সতর্ক করলেন মন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আরো ঋণ নেয়ার বিষয়ে দু’বার ভাবতে হবে। কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি ঋণগ্রস্ত উদীয়মান বাজারগুলোতে চাপ বাড়ায়। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কামাল আরো বলেন, চীনকে তার ঋণের মূল্যায়নে আরো কঠোর হতে হবে। কারণ দুর্বল ঋণের সিদ্ধান্ত দেশগুলোকে সঙ্কটে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। অর্থমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেখানে চীনা-সমর্থিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো রিটার্ন জেনারেট করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং দ্বীপরাষ্ট্রকে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়। কামাল যোগ করেন, সবাই চীনকে দোষারোপ করছে, কিন্তু চীন থেকে ঋণ নেয়ার পর তার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে। কামালের মতে, শ্রীলঙ্কার সঙ্কট থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে কোন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চীন যথেষ্ট কঠোর ছিল না। হিন্দুস্তান টাইমস।
অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি প্রকল্পে ঋণ দেয়ার আগে সেটিকে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন’ করতে হবে। শ্রীলঙ্কার পর আমরা অনুভব করেছি যে চীনা কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ দিকটির দিকে নজর দিচ্ছে না, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের ফলে বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপের পর পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সাহায্য চেয়েছে। চীনের বিআরআইতে অংশগ্রহণকারী শ্রীলঙ্কা বেইজিংয়ের কাছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে যা তার মোট বৈদেশিক ঋণের ৬ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিসহ অন্যান্য বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আরো ৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। তিনি আশাবাদী তাদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ঘাটতির কারণে দৈনিক বহু-ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের বৈদেশিক রিজার্ভও এক বছর আগের ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের শক্তিশালী রফতানি খাত, বিশেষ করে পোশাক বাণিজ্য, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে এবং রিজার্ভ এখনো প্রায় পাঁচ মাসের মূল্যের আমদানির জন্য যথেষ্ট। তবে কামাল একটি বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশ চাপের মধ্যে থাকলেও শ্রীলঙ্কার মতো খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল