২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সায়েন্সল্যাবের কোভিড কিট আবিষ্কার!

-

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর বা সায়েন্সল্যাব) কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট আবিষ্কারের দাবি করেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। এ দিকে ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এটা কোনো আবিষ্কার নয়। আন্তর্জাতিক একটি (সিগমা) কোম্পানি বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদকে কিটের প্রাইমার (কিটের প্রাথমিক অবস্থা) সরবরাহ করছে। এই প্রাইমার থেকে যেকোনো মাইক্রোবায়োলজিস্ট কোভিড-১৯ কিট তৈরি করতে পারবে। সায়েন্সল্যাব সিনথেসাইজার মেশিন কিনেছে। এ মেশিনটির মাধ্যমে প্রাইমার থেকে কিট বানাতে পারবে যেকোনো মাইক্রোবায়োলজিস্ট। এখানে আবিষ্কারের কিছু ঘটেনি। শুধু শুধু এখানে সরকারের কিছু অর্থ অপচয় হয়েছে।
এ দিকে গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সায়েন্সল্যাবের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: আফতাব আলী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো: শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আতিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল হাসান, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফজালুন্নেসা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সায়েন্সল্যাব যে কোভিড কিট আবিষ্কার করেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে কিউআরটি পিসিআর কিট ব্যবহার হচ্ছে। এ রকম একটি কিটের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু সায়েন্সল্যাব যে কিট আবিষ্কার করেছে এর দাম পড়েছে প্রতিটি ২৫০ টাকা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে এর দাম আরো কমে যাবে। তাদের আবিষ্কৃৃত কিট প্রতি মিলিলিটারে ১০০ কপি ভাইরাস পেলেই কোভিড শনাক্ত করতে পারবে। সায়েন্সল্যাব দাবি করেছে, আরটিপিসিআর মেশিনে প্রতি মিলিলিটারে এক হাজার ভাইরাস থাকলে শনাক্ত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সায়েন্সল্যাবের আবিষ্কৃত কিটটি ভালো। এ ছাড়া কোভিড ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট না করে সায়েন্সল্যাব ভাইরাসের প্রোটিনের এম জিনকে টার্গেট করে কোভিড চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। কারণ স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন ঘটলেও এম জিনে অন্যান্য জিনের মতো মিউটেশন প্রবণতা কম। তাই এই কিটে ফলস নেগেটিভ ফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই কিটের জন্য টার্গেটকৃত প্রাইমার ও প্রোব বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে ডিজাইন করেছেন। বিশ্বের আর কোনো কোম্পানি এম জিনের প্রোটিনকে টার্গেট করে কিট তৈরি করেনি। তাই তাদের আবিষ্কৃৃত কিটটি অন্য বাণিজ্যিক কিটের তুলনায় স্বতন্ত্র।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, বিসিএসআইআরে দেশের ট্যালেন্টেড বিজ্ঞানীরা কাজ করেন। সরকার এই বিজ্ঞানীদের বয়সসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমান করেনি। তিনি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা তাদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরুন। বিসিআরআইআরের গবেষণাগারে করোনা ভাইরাসের দুই হাজারের বেশি জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড কিট আবিষ্কার জাতির একটি বড় সফলতা। করোনা ভাইরাস কতদিন থাকবে জানি না, তবে এই আবিষ্কার অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে কাজে লাগবে।
এ দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাইরোলজিস্ট নয়া দিগন্তকে বলেছেন, একটি প্রাইমার সিনথেসিস মেশিন হলেই এবং প্রাইমার পাওয়া গেলে এ কিট সম্বন্ধে জানেন এমন যে কোনো লোকই কিট তৈরি করতে পারবেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করে কিট তৈরি করেছে। কারণ স্পাইক প্রোটিন থেকেই জানা যায়, ভাইরাসটি কতটা শক্তিশালী এবং মিউটেশন করবে কি না। এ ছাড়া এম জিন কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিন নয়, যে কারণে বিজ্ঞানীরা এটাকে টার্গেট করে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement