২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিজিটাল হাটেও মিলছে গরু-ছাগল

কোরবানির পশুহাটে ক্রেতার অপেক্ষা

গাবতলী হাটে রাজাবাবু নামের ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা থেকে ভাসান নামে এক ব্যবসায়ী গরুটি এনেছেন : নয়া দিগন্ত -

রাজধানীর প্রতিটি হাটেই এখন কোরবানির পশু ভরে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে রাত-দিন গরু-ছাগল নামছে। হাটে ক্রেতার উপস্থিতিও বেড়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে টুকটাক। তবে রাখার ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই পশু কিনতে চান না বেশির ভাগ কোরবানিদাতা। ঈদের বাকি এখনো পাঁচ দিন। ঈদের দু’দিন আগে থেকে বিক্রি ভালো হবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। সেজন্য এখন ক্রেতার অপেক্ষায় দিন কাটছে বিক্রেতাদের।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এবার দেশে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে এবার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৯টি। ফলে ২৩ লাখেরও বেশি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এ কারণে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরের পশুহাটগুলো জমে উঠেছে। সেখানে কোরবানিদাতাদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও গরু-ছাগল কিনছেন। সেসব গরু-ছাগল আনা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে। ফলে রাজধানীর ২১টি হাটই এখন গরু-ছাগলে ভর্তি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন আশিয়ান সিটির অস্থায়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে হাজার হাজার গরু। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাক ভর্তি করে পশু নিয়ে এসেছেন। আশিয়ান সিটি সংলগ্ন এ হাটটি কাওলা শিয়ালডাঙ্গা হাট নামে পরিচিত। পুরো এলাকায় এক কিলোমিটারে জুড়ে পশু রাখা হয়েছে বিভিন্ন ছাউনিতে। নাটোর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, গত রাতে ১৯টি গরু নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। দুই-একজন আসছিল, দরদাম করে চলে গেছে। তিনি জানান, গত বছর ২০টি গরু এনেছিলেন। বিক্রি হয়েছিল ১৬টি। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার খামারি মামুন চারটি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, চারটিই আমার পোষা গরু। গতকাল রাতেই এলাম। এখনো কেউ এসে দাম করেনি।
ভাটারা সাঈদ নগর হাট ঘুরে দেখা যায়, পুরো হাট ভরা গরু। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এনেছেন পাইকাররা। তারা হাটে গরু রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। তবে ঈদের এখনো বেশ কিছুদিন বাকি থাকায় আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতাদের আগমনও খুবই কম হাটটিতে। বিক্রেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে হাটটিতে বেশির ভাগ গরু চলে এসেছে, বাকি কয়েক দিনেও আরো বেশ কিছু গরু আসবে। তবে বিক্রি শুরু হয়নি একদমই। তারা বলেন, পশুর খাদ্যের খরচ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গরুর দাম বাড়তি।
বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু এ হাটে এনেছেন। তিনি বলেন, হাটে ইতোমধ্যে প্রচুর গরু এসেছে তবে বিক্রি এখনো তেমন শুরু হয়নি। যদিও আমার একটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে, তবে অন্যরা এখনো বিক্রি শুরু করতে পারেনি। ঈদের দুই-তিন দিন আগ থেকে মূলত বেচা বিক্রি শুরু হবে। এখন প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক ভরে গরু আসছে এখানে।
এবার গরুর দাম বাড়বে উল্লেখ করে এ বিক্রেতা বলেন, গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি, এক বছরে বলতে গেলে খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে আমাদের কেনা দামও বেশি পড়েছে, তাই বিক্রিও করতে হবে বেশি দামেই। এ ছাড়া গরু পরিবহনের ট্রাক ভাড়া, রাস্তার খরচ, আবার এখানে সাত থেকে আটজন মিলে এসেছি, এর একটা খরচ আছে প্রতিদিনের। সব মিলিয়ে এবার গরুর দাম বেশি যাবে।
কোরবানি পশুর ডিজিটাল হাট শুরু : ‘এক ক্লিকে গরু যাবে হাট থেকে হাতে’ এমন স্লোগানে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে শুরু হয়েছে ডিজিটাল কোরবানি পশুর হাট। গত রোববার এ হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দেশে করোনা মহামারী দেখা দিলে ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিজিটাল পশুর হাট চালু করে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে ৬৪ জেলায় কোরবানি পশুর ডিজিটাল হাট চালু হলো। সরকারের আইসিটি বিভাগ, একশপ-এটুআই, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাব আয়োজন করেছে এ কেন্দ্রীয় অনলাইন কোরবানির পশুর হাটের। সহযোগিতায় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।
অনুষ্ঠানে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালে অনলাইন কোরবানি হাট হিসেবে ডিজিটাল হাটের সফল বাস্তবায়ন করেছে ই-ক্যাব। ২০২০ সালে ২৭ হাজার এবং ২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি করে মাইলফলক সৃষ্টি করেছে ডিজিটাল হাট। ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এ ধরনের জীবন্ত প্রাণী এবং উচ্চমূল্যের এ ধরনের সার্বজনীন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশ্বে খুব বিরল। এ দিকে এবার ডিজিটাল হাটে দুটো নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গরুর ওজন মাপার ডিজিটাল ক্যালকুলেটর এবং পূর্বাচলে গরু রাখার জন্য একটি জায়গাও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মে যারা পশু বিক্রি করবেন তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানানো হয়।
এ দিকে ডিএনসিসির ১০টি হাটেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে গরু কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনলাইনে আবেদন করলে গরু ক্রেতার বাসায় বসে যাবে। অনলাইনে পশু বিক্রির হাট ফরমরঃধষযধধঃ.মড়া.নফ এ গতকাল দেখা যায়, একটি লাল রঙের গরু প্রদর্শন করা হচ্ছে। যার ওজন ১৫৫ কেজি বা প্রায় চার মণ। জবাই করার পর গরুটিতে আনুমানিক ৯৩ কেজি গোশত পাওয়া যাবে জানিয়ে গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৭৩ হাজার ৬২৫ টাকা। দেশী এ ষাঁড়টির বিক্রেতা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের। এ ছাড়া সেখানে ৬৯ হাজার ৩৫০ টাকা, এক লাখ ১৯ হাজার ২২৫ টাকা, এক লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা দামের গরুও রয়েছে। রাজধানীর সরাসরি হাট ও অনলাইন হাট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনলাইনে দাম খুব বেশি নয়। বরং সাশ্রয়ী দামই ধরা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement