১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আগারগাঁওয়ে প্রশাসনিক ভবন

খরচের মিল নেই গণপূর্তের সাথে

প্রতি বর্গমিটারের খরচ প্রায় ৪৫ হাজার টাকা; লিফট, আইপি ক্যামেরা, এসির দামে তারতম্য
-

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর খরচ প্রাক্কলনে গণপূর্তের (পিডব্লিউডি) রেট শিডিউলকে মানা হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত দরের বাইরে গিয়েই এখন কিছু কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের পণ্যের দাম ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। শেরেবাংলা নগরে প্রশাসনিক এলাকায় ১২তলা সরকারি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। ২০১৮ সালের গণপূর্তের পণ্য দরের চেয়ে অনেক বেশি দর দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এখন প্রতি বর্গমিটার ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। যা অনেক বেশি বলে ভবন নির্মাণ ব্যবসার সাথে জড়িত এবং পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ঢাকা শহরে সরকারি পর্যায়ে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফলে চাহিদা অনুযায়ী নতুন অফিস নির্মিত না হওয়ায় দাফতরিক কাজের পরিবেশও সুষ্ঠু হচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ভাড়া বাড়িতেও সরকারি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই শেরেবাংলা নগরে প্রশাসনিক এলাকায় ১২তলা সরকারি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে ১৬৭ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌথ অবকাঠামো বিভাগের কাছে। শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় এফ ব্লকের প্লট নং-এফ-১৫/সি এবং এফ-১৫/ডি মিলে মোট দশমিক ৬৮ একর জমিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনুমোদন পেলে তিন বছরে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। মূল কাজ হলো তিনটি বেইজমেন্টসহ ১২ তলা অফিস ভবন নির্মাণ করা, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, জেনারেটর, লিফট, রাস্তা প্রাচীরসহ গেট, এসটিপিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা।
প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে, ২৫ হাজার ৮৭৪ বর্গ মিটারে ১২তলা মূল অফিস ভবন, ভূ-গর্ভস্থ জলাধার, পাম্প হাউস ও পানি সরবরাহ লাইন, ডিপ টিউবওয়েল, বৃষ্টি পানি সংরক্ষণাগার, এসটিপি, বিভিন্ন মানের ছয়টি লিফট সংগ্রহ, ১৫ এইচপি সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প মোটর সেট, অগ্নি নির্দেশক ও নির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপন।
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকারের লিফট ও আইপি বেজড ক্যামেরার ক্ষেত্রে রেট শিডিউলের সাথে দরের তারতম্য রয়েছে। সাড়ে ১২০০ কেজি যাত্রী লিফট (১৫ষ্টপ) গণপূর্তের দর হলো ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আর প্রস্তাবনায় এটা ৮২ লাখ ৫ হাজার টাকা। ১৬০০ কেজি যাত্রী লিফট (১২ষ্টপ) গণপূর্তের দর হলো ৮৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা। আর প্রস্তাবনায় এটা ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। ১৬০০ কেজি ফায়ার কাম যাত্রী লিফট (১২ ষ্টপ) গণপূর্তের দর যেখানে ৯৫ লাখ ৬ হাজার টাকা, সেখানে প্রস্তাবনায় এটা এক কোটি এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আর আইপি ক্যামেরা প্রতিটি যেখানে গণপূর্তের দর ৩১ হাজার টাকা, সেখানে প্রস্তাবনায় প্রায় দ্বিগুণ বা ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এসির মূল্য প্রতি টন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা অধিক বলে অভিমত দিয়েছে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।
ভবন নির্মাণ খরচের মধ্যে মাটি পরীক্ষা বাবদ ছয় লাখ ২০ হাজার টাকার সংস্থাপন থাকার পরও পুনরায় মাটি পরীক্ষা বাবদ অন্য কোডে ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা রাখার যৌক্তিকতা নেই। ইলেকট্রিক্যাল আইটেমগুলোর ক্ষেত্রে গণপূর্তের দর ব্যয় প্রাক্কলন করা বাঞ্ছনীয়।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, ফোর্স ভেন্টিলেশন সিষ্টেম, ব্যাগ স্ক্যানার, আর্চওয়ে, বিল্ডিং ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, কার পার্কিং সিস্টেম শিডিউল বহির্ভূত আইটেম হওয়াতে এসবের জন্য একটি বাজার দর যাচাই কমিটি গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে খরচ প্রাক্কলন করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: মামুন আল রশীদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা পিইসিতে পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে সব হিসাব যাচাই করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করব। নির্মাণ কাজের জন্য গণপূর্তের রেট শিডিউলই সরকারিভাবে গ্রহণযোগ্য। এর বাইরে করার কিছু নেই। তিনি বলেন, যাচাই বাছাই করব, কমিটির মাধ্যমে দর ঠিক করতে বলব।


আরো সংবাদ



premium cement