২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

খবর পরিবেশনের ধরনেও আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে

দেশে দৈনিক গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করে
-

বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা অনেক কারণে ঘটে থাকে। এর মধ্যে দায়িত্বশীল খবর পরিবেশনের অভাবে এসব খবর পড়েও অনেকে আত্মহত্যা করে থাকে। তারা বলছে, খবরের শিরোনামে আত্মহত্যা থাকলেও অনেকে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত ‘রেসপন্সিবল রিপোর্টিং অন সুইসাইড’ শীর্ষক কর্মশালায় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ‘আত্মহত্যার সংবাদ : কেমন হওয়া উচিত’ এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা: হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রায়ই ‘পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা’ এমন শিরোনামে খবর পরিবেশিত হয়ে থাকে। এ ধরনের শিরোনাম পরের বছরে পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যার উপায় বাতলে দেয়। এ ধরনের শিরোনামে অনেকের মধ্যে চট করে সিদ্ধান্ত চলে আসে পরীক্ষায় ফেল করলে কী করতে হবে, ফলে অনেকে আত্মহত্যা করে বসে। খবরে আত্মহত্যার ঘটনায় সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে আত্মহত্যাকারীকে নিজেদের অজান্তেই ‘নায়কোচিত’ ভূমিকায় রূপান্তর করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যা করলে ‘মৃত আমি’ অনেক সহমর্মিতা পাবো যা অনেকটা সামাজিক ন্যায়বিচারের বিকল্প হবে, এই বোধে ঘটাতে পারে আরো নতুন আত্মহত্যা। আত্মহত্যা রোধে মিডিয়াকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
ডা: হেলাল উদ্দিন উদাহরণস্বরূপ বলেন, ২০০৮ সালে হংকংয়ের মিডিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফু কে ডব্লিউর গবেষণার পর, হংকংয়ের চাইনিজ ও ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোতে আত্মহত্যার সংবাদগুলো প্রকাশ না করায় অথবা প্রকাশ করলেও অত্যন্ত কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করায় সেদেশে আত্মহত্যার হার ও প্রবণতা কমে গেছে।
ডা: হেলাল উদ্দিন সংবাদমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দয়া করে আত্মহত্যার সংবাদগুলো প্রথম পৃষ্ঠায় বা অন্যত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকাশ করবেন না। শিরোনামে এমন কোনো শব্দ বা বাক্যরীতি ব্যবহার করা উচিত নয় যা পাঠক বা দর্শককে উদ্দীপনার খোরাক দেয়। আবার এটা যেন স্বাভাবিক মৃত্যু না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন, ‘ঋণ থেকে চির মুক্তি পেল অমুক’ বা ‘প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তরুণের বিষপান’ ইত্যাদি শিরোনাম এড়িয়ে চলার অনুরোধ করেন তিনি। কিভাবে একজন আত্মহত্যা করেছে বা করার চেষ্টা করে কেন ব্যর্থ হয়েছে, সে বিষয়গুলো যেন বিস্তারিত বিবরণ আত্মহত্যার সংবাদে না থাকে। এ ধরনের বিবরণ ভবিষ্যতে আরো একজনকে একটি ‘সফল' আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বলেন, আত্মহত্যার পরে মৃতদেহের ছবি বা ভিডিও ফুটেজ কোনোভাবেই প্রকাশ করা উচিত নয়। সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত বা জনপ্রিয় কেউ আত্মহত্যা করে ফেললে বিষয়টিকে দ্বিগুণ সতর্কতার সাথে পরিবেশন করা উচিত। এর বিপরীতে আত্মহত্যাকারীর পরিবারের নিকটজনদের শোকের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা উচিত। আবার এমন কোনো শব্দ বা তথ্য দেয়া যাবে না যাতে নিকটজনদের শোক আরো ঘনীভূত হয় এবং তাদের মধ্যেও আবার আত্মহত্যার ইচ্ছা জেগে ওঠে। এক্ষেত্রে মিডিয়াগুলোকে পরিবার বা স্বজনদের সাক্ষাৎকার নেয়ার বিষয়ে অতি সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, সংবাদে সচেতনতামূলক তথা, আত্মহত্যার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা কোথায় সাহায্য পেতে পারেন সে বিষয়ে তথ্য থাকতে পারে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, দেশে আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে। অধিকাংশ আত্মহত্যার শিকার নারীরা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ২৫৬টি। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার। ২০১৯ সালে দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আর ২০২০ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৬টিতে। আর সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল