২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বছরে ১.৯২ লাখ টন প্লাস্টিক মিনিপ্যাক বর্জ্য উৎপাদন ৪০ শতাংশই খাদ্যপণ্যের

এসডোর সমীক্ষা প্রতিবেদন
-

প্রতি বছর দেশে এক লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টন প্লাস্টিক স্যাশে বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। এই ‘স্যাশে বর্জ্য’ যা আমাদের কাছে মিনিপ্যাক (একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক) পণ্য নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ১৩ কোটি বা ১২৯ মিলিয়ন স্যাশে ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার ‘প্লাস্টিক স্যাশে : স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শিরোনামের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকা, রংপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে পরিচালিত একটি জরিপের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সমীক্ষা অনুসারে, দেশে প্লাস্টিক স্যাশে বা মিনি প্যাকের ব্যবহার এবং ব্যবহার পরবর্তী বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। সেখানে এসডোর এই গবেষণা অনুসারে, প্লাস্টিকের স্যাশে পণ্যকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, দেশে উৎপন্ন মোট প্লাস্টিক ব্যাগের ৪০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী থেকে তৈরি হয়, এরপরে প্রসাধনী পণ্য (২৪ শতাংশ), ওষুধ (৪ শতাংশ), পানীয়, ঘর পরিষ্কারের পণ্য, রান্নার উপাদান ৭ শতাংশ ছাড়াও অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।
৪০ শতাংশ খাবারের স্যাশের মধ্যে আছে চিপস, টমেটো সস, জুস এবং গুঁড়ো দুধ, কফি ইত্যাদি। ওষুধের স্যাশের মধ্যে আছে, স্যালাইনের প্যাকেট এবং মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনার। রান্নার উপাদানগুলো মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় ঢাকা ও রংপুরের ৩৫৩ জন উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্যাম্পু/কন্ডিশনার (৬৯ শতাংশ), স্যালাইন প্যাক (৫০ শতাংশ), ইনস্ট্যান্ট পানীয় পাউডার (৩০ শতাংশ) ক্রয় করেছেন।
মন্ট্রিয়ালের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি নতুন গবেষণায় পাওয়া গেছে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের চা ব্যাগ থেকে আমাদের মগে প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা এবং ৩.১ বিলিয়ন ন্যানো প্লাস্টিক নির্গত হয়।
অনুষ্ঠানে সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট আকারে ছোট হলেও পরিবেশে এর প্রভাব বিশাল।’ তিনি সরকারের কাছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের বিশেষ করে স্যাশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ কার্যকর করার অনুরোধ জানান।
প্লাস্টিক স্যাশের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে এসডোর উপদেষ্টা বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ মিনি প্যাকেটের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই জনগণের মধ্যে আরো সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই মিনি প্যাকেটগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও উৎপাদকদের উচিত এসব স্যাশে উৎপাদন বন্ধ করে রিফিল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যখন বাজারে স্যাশে ছিল না এবং মানুষ কেনাকাটার জন্য রিফিল সিস্টেম ব্যবহার করত।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা এই বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারকে প্লাস্টিকের স্যাশের পরিবর্তে সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রচার করতে এবং একটি আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া ৫.২) এরই মধ্যে একটি আন্তঃসরকারি কমিটি গঠন করা এবং ২০২৪ সালের মধ্যে লিগ্যালি বাইন্ডিং প্লাস্টিক কনভেনশন নিয়ে আলোচনা ও তা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশসহ ১৭৫টি দেশ এই বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তাই আমাদের উচিত নিজেদের এর জন্য প্রস্তুত করা এবং দেশব্যাপী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।


আরো সংবাদ



premium cement