২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাঠে মজুদ সাড়ে ৫ লাখ টন লবণ তারপরও আমদানি দেড় লাখ

-

চলতি মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন উপাদন ঘাটতি নিয়ে লবণ উৎপাদন মৌসুম শেষ হয়েছে। অপর দিকে গতকাল পর্যন্ত লবণ মিল ও মাঠেসহ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে। এক দিকে লবণের মজুদও কমে আসছে অপর দিকে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণেও বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় পাইকারি লবণের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ভাব দেখা দিয়েছে। সে কারণে সরকার লবণের ঘাটতি মোকাবেলায় দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইতোমধ্যে এ বি সি ও ডি ক্যাটাগরিতে ওই লবণ আমদানি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে লবণ মিল মালিকদের। এ ক্যাটাগরিতে পাঁচটি লবণ মিলকে মিলপ্রতি দুই হাজার ৯৯০ কেজি, বি ক্যাটাগরিতে ৪৭টি মিলকে মিলপ্রতি ১০০০ হাজার টন, সি ক্যাটাগরিতে ১০৩টি মিলকে মিলপ্রতি ৬০০ টন ও সি ক্যাটাগরিতে ৭৫টি মিলকে মিলপ্রতি ৩৫০ টন লবণ আমদানি করতে পারছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ নুরুল করিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় লবণ আমদানির জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হয়েছে।

চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন ও চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। অপর দিকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন মৌসুম শেষে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার।
চলতি মৌসুমে উৎপাদনের শুরুতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কবলে পড়ে হাজার হাজার চাষি লবণের মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। ওই সময়ে লবণের মূল্য নেমে আসে ধোলাই খরচসহ ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। যেখানে প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে খরচ হয় গড়ে ২৪৭ থেকে ২৫০ টাকা।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে (সোডিয়াম সালফেট যেহেতু দেশে উৎপাদন হয় না) অতিরিক্ত লাখ লাখ টন সেডিয়াম ক্লোরাইড (ভোজ্যলবণ) আমদানি করে বিনা বাধায় তা বাজারে বিক্রি করার কারণে দেশের চাষিরা উৎপাদিত লবণের প্রকৃত মূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন। এ কারণে চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রথমে লিকুইড ও কালার ফর্মে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সব ধরনের শিল্প কাজে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করে। এর ফলে আমদানিতকৃত লবণের মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকার ওপরে পড়ে।

সরকারের কার্যকরী কয়েকটি উদ্যোগের ফলে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় উপকূলে উৎপাদিত লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুম থেকে চাষিদের মধ্যে লবণ চাষে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে।
অপর দিকে মৌসুমের শুরুতে ফেব্রুয়ারিতে অপরিশোধিত লবণ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে প্রকার ভেদে ৩৭০ টাকা পর্যন্ত।

চাষিরা জানান, সরকারিভাবে উৎপাদিত লবণের মূল্য নির্ধারণ না থাকার কারণে যারা মাঠ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণ ক্রয় করে লবণ মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করেন তারা লবণের প্রকৃত মূল্য নিয়ে কারসাজি করছেন আবার তারা বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মণে ৪৮/৫০ কেজি ধরে লবণ ক্রয় করছেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণ ক্রয় ও বিক্রি দুইভাবে লাভবান হলেও চাষিরা প্রকৃত মূল্য নিয়ে প্রতারিত হয়ে আসছেন। সে কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণের জন্য তারা দাবি করেন।

বাঁশখালী সনুয়ার লবণচাষি মোহাম্মদ বেলাল জানান, গতকাল প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছেন ৩২০ টাকা করে। তিনি বলেন, মাঠে প্রচুর লবণ মজুদ রয়েছে। তার কাছেও রয়েছে ১০০০ টন। তিনি বলেন, লবণ আমদানি করলে আবার চাষিরা উৎপাদিত লবণের মূল্য পাবে না বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০২০-২০২১ মৌসুমে ২২ লাখ ১৭ হাজার টন লবণ চাহিদার বিপরীতে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর লবণ মাঠে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বলা যায় ওই মৌসুম লবণ উৎপাদনের ঘাটতি নিয়েই শেষ হয়েছিল।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে না থাকায় কিছুটা ঘাটতি নিয়ে মৌসুম শেষ হয়। চলতি মৌসুমে ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। লবণ আমদানির কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, গতকাল পর্যন্ত মাঠে উৎপাদিত লবণ রয়েছে প্রায় চার লাখ টন ও লবণ মিল মালিকদের কাছেও রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। সে কারণে লবণের পাইকারি বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

বাংলাদেশ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, প্রকৃত লবণ মিল মালিকদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হচ্ছে বলে লবণের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement