২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সরাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে থ্রি-স্টার রিসোর্ট

সরাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা থ্রি-স্টার রিসোর্ট : নয়া দিগন্ত -

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের পাশে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকায় বিল আকাশীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে থ্রি-স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের হাফেজ আলী নেওয়াজ, ইব্রাহিম মৃধা ও কালিকচ্ছ ইউনিয়নের মনিরবাগ এলাকার জিহাদ আহমেদ নামের তিন বন্ধুর যৌথ প্রচেষ্টায় এখানে গড়ে উঠছে থ্রি-স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট।
সরেজমিন রিসোর্ট এলাকা ঘুরে উদ্যোক্তা ও পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কপথে সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার জনগণের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক সরাইল-নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়ক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোডের সাথে সংযুক্ত সড়কটি উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকার হাওরবেষ্টিত শাপলা বিল প্রকাশ বিল আকাশীর বুক ছিঁড়ে নাসিরনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ধর্মতীর্থ এলাকার বিল আকাশীর মধ্য দিয়ে সড়কটি যাওয়ায় সড়কের দুই দিকের বিশাল হাওর এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে সড়কের দুই দিকে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কেবল পানি আর পানি বিদ্যমান থাকে। বর্ষায় পানির ঢেউয়ের তালে তালে মুক্ত হাওয়া উপভোগ করতে পড়ন্ত বিকেলে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখানে ভিড় জমান। সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও এর আশপাশের জেলা থেকে ভ্রমণপিপাসু লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসহ ঢেউয়ের তোড়ে যুক্ত হাওয়া উপভোগ করতে এখানে ছুটে আসেন। বর্ষা মৌসুমে ও ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। এ সময় সাময়িক সময়ের জন্য হাওরের পানিতে, নৌকা ও স্পিডবোটে এবং সড়কের ওপর ঘোড়াসহ বিভিন্ন গাড়িতে পর্যটকদের ঘুরতে দেখা যায়। এ ছাড়া বছরের দুই ঈদ উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে এখানে জমে পর্যটকদের মিলনমেলা। এ সময় নাগরদোলাসহ পর্যটকদের বিনোদনের বিভিন্ন সামগ্রী থাকতে দেখা যায়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সড়কটির দুই তীরে বসার মতো স্থায়ী কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। পর্যটকদের প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য এখানে নেই কোনো পাবলিক টয়লেট। এ ছাড়া পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নেই কোনো স্থায়ী অবকাঠামো। এমনই অবস্থায় পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে বিনোদনের জন্যও এখানকার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কিছু একটা হোক। অবশেষে ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে থ্রি-স্টার রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের নির্মাণকাজ চলমান থাকার খবরে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নির্মাণাধীন এই থ্রি-স্টার রিসোর্ট দেখতে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু লোকজন সেখানে ভিড় জমান। ভ্রমণপিপাসু অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা শাহাগীর মৃধা নামের এক পর্যটক বলেন, মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাত ধর্মতীর্থ এলাকার বিল আকাশীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসেন। কিন্তু এখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। স্থায়ী কোনো স্থাপনায় লোকজন না থাকায় সন্ধ্যার পরে এখানে চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার কাজের জন্য এখানে কোনো পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো বিনোদনকেন্দ্র। ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য এখানে কিছু একটা হোক এমনটাই ছিল এখানে ঘুরতে আসা লোকজনের দীর্ঘদিনের দাবি। অবশেষে ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে থ্রি-স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নির্মিত হওয়ার খবর পেয়ে দেখতে এসেছি। রিসোর্টটি দেখে অনেক ভালো লাগছে। আশা করি এই রিসোর্ট নির্মাণকাজ শেষ হলে এখানে আসা পর্যটকরা বাড়তি আনন্দ ও সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এই জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রিসোর্ট নির্মাণে জড়িত তিনজন উদ্যোক্তার একজন উপজেলার নোয়াগ্রামের বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টি নেতা হাফেজ আলী নেওয়াজ বলেন, দুই বছর ধরে পরিকল্পনা করে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের দিক ভেবে আমরা তিনজন মিলে আমাদের নিজস্ব ১৫ বিঘা জমিতে একটি থ্রি-স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নির্মাণকাজ গত তিন মাস আগে শুরু করেছি। পরিপূর্ণভাবে কাজ শেষে হতে আরো দুই বছর লাগবে। তিনি আরো বলেন, নির্মাণাধীন এই রিসোর্টের আশপাশে আমাদের আরো একশত বিঘা জমি রয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণসহ একটি শিশুপার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েই প্রাথমিকভাবে থ্রি-স্টার রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কাজ শুরু করেছি। পরিপূর্ণভাবে নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হবে বলে আমরা আশাবাদী। এ ব্যাপারে আমরা সবার সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement