১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লক্ষাধিক বন্যাদুর্গত পরিবারকে বিএনপির সহায়তা

চলছে ত্রাণের ফান্ড সংগ্রহ কার্যক্রম, কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য চাঁদা নির্ধারণ
-

দেশের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। তারা নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার্তদের সাহায্যের লক্ষ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে একটি জাতীয় ত্রাণ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটি ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ত্রাণ-ফান্ড সংগ্রহ শুরু করেছে। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে প্রদানের সময় নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে ত্রাণ কমিটি। সম্প্রতি গুলশানে দলের ত্রাণ কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তারেক রহমান নিজেই দলের ত্রাণ-ফান্ডে এক লাখ টাকা অনুদান প্রদানের কথা জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন, কারো কাছে যাওয়ার আগে নিজেদেরও সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সাহায্য করতে হবে। এরপরই ত্রাণ কমিটি একাধিক উপ-কমিটি করেছে। এসব কমিটির নেতারা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। একইসাথে ত্রাণ-ফান্ড সংগ্রহ করছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য ১০ হাজার টাকা, উপদেষ্টাদের জন্য ৫ হাজার টাকা, সম্পাদকদের জন্য ৩ হাজার টাকা, সহ-সম্পাদকদের জন্য ২ হাজার টাকা এবং নির্বাহী সদস্যদের জন্য ১ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির উদ্যোগে লক্ষাধিক পরিবার এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বন্যাকবলিত এলাকায় ২০ হাজার পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক পরিবারকে নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। বিরোধী দলে থেকেও সাধ্যমতো প্রতিদিনই বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গণমানুষের রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। অতীতে করোনাকালে আমরা সারা দেশে বিভিন্ন ভাবে হেল্পসেলের মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছি। এখন বন্যার্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছে আমরা বন্যার্তদের জন্য সহায়তা কামনা করছি। তারা বেশ সাড়া দিচ্ছেন। এই বন্যাই শেষ নয়, আরো বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং যতদূর সম্ভব বন্যার্তদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত মানুষকে ত্রাণসহায়তা করছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। তিনি গতকাল বলেন, ভয়াবহ বন্যায় অনেক সচ্ছল ও মধ্যবিত্ত পরিবার প্রায় নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম। অনেকের মূল্যবান জিনিস, কারো গবাদিপশু, ধান-চাল ও প্রয়োজনীয় শস্য বিনষ্ট হয়েছে। মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও রান্না করা খাবারের কষ্টে ভুগছেন। এখন এলাকায় ডাকাতির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে সরকারকে আরো বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানিবাজার) আসনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ব্যাপক ত্রাণকার্যক্রম চালাচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মরহুম মাওলানা রশিদ আহমদ চৌধুরীর ছেলে তামিম ইয়াহিয়া আহমদ। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাধ্যমতো সহায়তা অব্যাহত থাকবে। কিশোরগঞ্জের ইটনায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন ডা: ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী। তিনি বলেন, আমার বাবা ফরহাদ আহমেদ (কাঞ্চন) ১৯৭৯ সালে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে একবার পরাজিত করে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সন্তান হিসেবে এলাকাবাসীর প্রতি আমার দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বাদলা, রায়টুটি, চৌগাংগা ও বড়িবাড়ি ইউনিয়নের গৃহহীন বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী প্রদান করেছি। তিনি এই আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানান।

জামালপুর-৫ (জামালপুর সদর) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। তিনি বলেন, জামালপুর সদরের লক্ষ্মীচর, কেন্দুয়া কালিবাড়ি ও মেসতা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে আমার তত্ত্বাবধানে কোরবানির আগেই ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, সেমাই, চিনি, শুকনা মরিচ ইত্যাদি বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা বন্যার্ত মানুষের একটি তালিকা করেছি। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রফিকুল আমিন ভুঁইয়া রুহেল রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতুলি, চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের মহেশবার ও বল্লমপুর গ্রামে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যেই নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও সদস্যসচিব মনজুর এলাহীসহ জেলার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে উল্লিখিত এলাকায় গিয়ে সহযোগিতা দিবেন বলে জানান। রুহেল সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মাইনউদ্দিন ভুঁইয়ার ছেলে ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য। এ ছাড়াও নেত্রকোনায় বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: আনোয়ারুল হক, নেত্রকোনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীসহ অনেকেই।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বৃহত্তর সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত নারী ও শিশুদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম। আজ শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সহায়তা প্রদান করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ^র চন্দ্র রায়। সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গৌরাঙ্গ ইউনিয়ন (লালপুর বাজার), গোবিন্দগঞ্জ বাজার, শাল্লা যাত্রাপুর গ্রাম, দিরাই ধল বাজার, বাগানবাড়ি এবং সিলেট মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।
ঢাকা বিভাগে ত্রাণ বিতরণের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ গতকাল শুক্রবার বলেন, এখনো ঢাকা বিভাগে বন্যার তেমন প্রভাব পড়েনি। তবুও আমরা ঢাকা বিভাগকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সাথে প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। বন্যার্তদের সহায়তায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ ও বিত্তবানরাও আমাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান বন্যার্তদের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। এজন্য তিনি প্রশংসার দাবি রাখেন। কেননা বন্যা দেখা দেয়া মাত্র তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে সরকার বানভাসি মানুষের কথা না ভেবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে তারেক রহমান বানভাসি মানুষের সহায়তায় দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement