ক্ষমতাসীনরা চায় তারা যা বলবে পুলিশ তাই করবে

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, এ দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায়, তারা যা বলবে, পুলিশ তাই করবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্রÑ এরা কখনো পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা মনে করে, পুলিশ তাদের নিজের সম্পদ। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি : স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
শহীদুল হক বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে কখনো মাথা নত করিনি। আমি চেয়ার ধরে চাকরি করিনি। বদলি হয়েছে, চলে গিয়েছি। চাকরিতে থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি। তবে আমার মতো তো সবাই পারবে না। এ জন্য একটা সিস্টেম বা পদ্ধতি চালু করা উচিত, যাতে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।’
সাবেক এই পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আমি দায়িত্বে থাকাকালে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু তা আর হয়নি। সেখানে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব যেমন ছিল, তেমনি পুলিশ কমম্পেইন (অভিযোগ) কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব ছিল।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র সংস্থা সেটা তদন্ত করবে। কিন্তু সেটা হয়নি আমলাদের কারণে। আর রাজনীতিকরা তো চাইবেই না। যদি রাজনৈতিক ও আমলাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন না ঘটে তাহলে সুশাসন যে কথাটা সেটা শুধু স্লোগানের মধ্যেই থাকবে।’
বিচারব্যবস্থা নিয়ে শহীদুল হক বলেন, বিচার ব্যবস্থার একটি অংশ পুলিশ। তারা যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম (অপরাধীদের বিচার ব্যবস্থা) কখনো কার্যকর হবে না। পুলিশ যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়।
পুলিশকে অনেক বৈরী পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই পুলিশের সেবা চায় কিন্তু কেউ পুলিশকে পছন্দ করে না। পুলিশকে ভয় পায় কিন্তু পুলিশকে ভালো জানে না। আমি বইতে লিখেছি, বাতাসের মধ্যে বসবাস করি বলে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করি না। তেমনি সমাজে পুলিশ আছে বলে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না।
‘সরকার যদি ঘোষণা দেয় ২ ঘণ্টার জন্য পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না, তাহলে দেশে কি পরিস্থিতি হবে সেটা আমরা অনুভব করি না। পুলিশকে বুঝতে হলে পুলিশের কাছে যেতে হবে। পুলিশকে আস্থায় নিতে হবে। সেই সাথে পুলিশকেও প্রচলিত ঔপনিবেশিক মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুটোরই পরিবর্তন দরকার।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বক্তব্য দেন সাবেক আইজিপি মো: নুরুল হুদা, বইটির সম্পাদক রাখাল রাহা, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি কামাল চৌধুরী ও দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দীন।