২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আট কার্যদিবস পর ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

এক দিনেই ফিরল ডিএসইর ১১৮ পয়েন্ট; আইপিও আবেদনে বিনিয়োগ থাকতে হবে ৩ কোটি টাকা
-

টানা আট কার্যদিবস পতনের পর গতকাল সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। আর দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
ডিএসইর পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৫৫৫ পয়েন্ট। শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হওয়ায় রোববার লেনদেন শেষে মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগে বিবিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব তহবিলের ৮০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ মার্জিন ঋণ নিতে পারতেন। বিএসইসির নতুন নির্দেশনার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব তহবিলের সমপরিমাণ মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ২৬১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৯০ শতংশ বা ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯টির। আর ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাহিনপুকুর সিরামিকের ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এসিআই ফরমুলেশন, ফরচুন সুজ, ওরিয়ন ফার্মা এবং আরডি ফুড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫১টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
আইপিও আবেদনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : পুঁজিবাজারের যোগ্য বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এখন থেকে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদন করতে হলে শেয়ারবাজারে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। একইভাবে যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত পেনশন ফান্ড ও স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি ফান্ডের আইপিও আবেদন করতে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।
পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সোমবার কমিশন সভা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। কমিশন সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি ফান্ড বাদে অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আগে কাট অফ ডেটে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন সেটিকে বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটিকে বাড়িয়ে এখন এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সেই সাথে অনুমোদিত পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এ জন্য অনুমোদিত পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডকে ইলেকট্রনিকস সাবসক্রিপশন সিস্টেমে (ইএসএস) নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ইলেকট্রনিকস সাবসক্রিপশন সিস্টেমে কিছু দলিল দস্তাবেজ পরীক্ষা করে নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদিত কপি। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিবরণী। সংশ্লিষ্ট ফান্ড তার আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ কোনো আইপিওতে বিনিয়োগ করতে পারবে না।


আরো সংবাদ



premium cement