২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চীনে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কমেছে

-

চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যাপকতা বহুমাত্রিক। বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রধানত আমদানিনির্ভর হলেও তৈরী পোশাকসহ বিভিন্ন রফতানি পণ্যের কাঁচামালের অন্যতম জোগানদাতা চীন। অপর দিকে চীনের বাজারে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য রফতানি করা হচ্ছে। এগুলো হলোÑ জুট বাস্ট ফাইবার, ওভেন গার্মেন্ট, নিটওয়্যার, চামড়া, আয়রন অ্যান্ড স্টিল, হিউম্যান হেয়ার, এডিবল অ্যাকোয়েটিক এনিমলস/ফিস অ্যান্ড ক্রাস্টাসেনস ফুটওয়্যার ইত্যাদি। এর মধ্যে অন্যতম চামড়াজাত পণ্য। করোনার আগে চীনে চামড়া রফতানির অবস্থান ভালো থাকলেও বর্তমানে এর অবস্থান মন্দার দিকে। চীনে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাজার সম্পর্কে সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায় বিগত কয়েক বছরে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হ্রাস পেয়েছে। এ জন্য রফতানি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পরামর্শ করা হয়েছে। সম্প্রতি চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কর্মাশিয়াল উইং এ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের বাজারে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের রফতানি চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চীনে চামড়া পণ্যের গড় রফতানি হয় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর বছর ২০২০ সালকে বাদ দিলে চামড়া পণ্যের সর্বোচ্চ রফতানি হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, যা ৭৬.৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন রফতানি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত চীনে চামড়া রফতানি হয় ৫৩.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গড় রফতানির চেয়ে বেশি।
বিগত ১০ বছরে চীনে শুধু চামড়াজাত পণ্যের রফতানি চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চামড়াজাত পণ্যের সর্বোচ্চ রফতানি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে, যা ১৪৪.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে চীনে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হ্রাস পেতে শুরু করে এবং সর্বনিম্ন রফতানি হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, যা ২.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি তথ্য অনুযায়ী চীনের বাজারে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বিগত কয়েক বছরে হ্রাস পেয়েছে।
এ ছাড়া চীনে ফুটওয়্যার পণ্যের সর্বোচ্চ রফতানি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে, যা ৩৩.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন রফতানি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে, যা ১২.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত ১০ বছরে চীনে ফুটওয়্যার পণ্যের গড় রফতানি হয় ১৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত চীনে ফুটওয়্যার রফতানি হয় ১৩.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কর্মাশিয়াল উইং বলছেÑ রফতানি তথ্য পর্যালোচানায় প্রতীয়মান হয় যে, চীনের বাজারে বাংলাদেশীয় ফুটওয়্যার পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
বর্তমানে চীন চামড়া আমদানি করে থাকে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া থেকে। বাংলাদেশের চামড়ার আকার অপেক্ষাকৃত ছোট; কিন্তু ওই সব দেশের চামড়ার সাইজ বড় এবং মেশিনের মাধ্যমে পশুর শরীর থেকে পৃথক করা হয় বলে তা চীনা ক্রেতারা লাভজনক মনে করে। এ ছাড়াও চীনা ক্রেতারা প্রতিযোগিতার বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন এবং বেশি মূল্যমানের চামড়া বাংলাদেশ থেকে আমদানির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইতালি এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনতেই বেশি আগ্রহী। অপর দিকে বিগত কয়েক বছরে কিছু বিশ্বমানের লেদার কোম্পানি বাংলাদেশীয় চামড়াজাত পণ্যের কারখানার সাথে যৌথভাবে লেদার প্রোডাক্টস উৎপাদন করায় চামড়ার চাহিদা বৈশ্বিক বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে।
বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে কর্মাশিয়াল উইং। তারা বলছে, চীনসহ বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী চামড়ার রফতানি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের শহর এবং গ্রাম এলাকায় সুবিধামতো একাধিক নির্ধারিত স্লটারিং সেন্টার স্থাপন করে মেশিনের সাহায্যে এবং এ কাজে দক্ষ জনবল দিয়ে জবাইকৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া পৃথক করতে হবে। তাহলে চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং চামড়ার গ্রেড উন্নত মানের (এ থেকে ডি) হবে, যা রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
চীনের স্থানীয় উৎপাদনকারীরা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বা সমমূল্যে অধিকতর ফিনিশড প্রোডাক্ট বাজারে সরবরাহ করতে পারায় বাংলাদেশ থেকে একই মূল্যে চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার আমদানিতে উৎসাহী নয়। অপর দিকে চীনা আমদানিকারকদের অফারকৃত মূল্যের চেয়ে গুণগত স্ট্যান্ডার্ড এর রিকোয়ারমেন্ট বেশি হওয়ায় বাংলাদেশী কিছু রফতানিকারকরা চীনে রফতানিতে খুব আগ্রহী হয় না। কিন্তু বিশ্বমানের ব্র্যান্ডেড পণ্যগুলোর চাহিদা চীনে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনে বাংলাদেশী ব্র্যান্ডগুলোর আউটলেট নেই। এ জন্য চীনের বাজারে বাংলাদেশী উন্নত মানের চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডগুলোর আউটলেট স্থাপন করে এজেন্টের মাধ্যমে মার্কেটিং, প্রোমোশন, অ্যাডভারটাইজমেন্ট এর মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্যের রফতানির সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement