২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাটি পরীক্ষা ও সুষম সার প্রয়োগে ফলন বেড়েছে

মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের গবেষণা
-

একেক জায়গায় মাটির রাসায়নিক গুণাগুণ থাকে একেক রকম। এ জন্য মাটি পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ফলন অনেক ভালো হয়। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কম হয়, তেমনি ফলন পাওয়া যায় আশানুরূপ। এবার টাঙ্গাইলে পরীক্ষামূলকভাবে মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে পরিমাণমতো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক। এই পদ্ধতিতে ধান আবাদে ফলন বেড়েছে ২৫ ভাগ। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গতকাল শনিবার সরেজমিন জানা যায়, মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের দ্ইু বিঘা জমি নেয়া হয় সুষম মাত্রায় সারের প্রায়োগিক ট্রায়ালের জন্য। আবাদ করা হয় উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ব্রি ধান-৯২। সেখানে ৩৩ শতাংশ জমিতে কৃষক সার প্রয়োগ করেন তার নিজের মতো করে। আর বাকি ৩৩ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করা হয় সুষম মাত্রায়। গতকাল সেই ধান কর্তন এবং মাড়াই শেষে পরিমাপ করে দেখা যায় ফলন বেশি হয়েছে অন্তত ২৫ ভাগ। এতে হাসি ফুটেছে কৃষক আনোয়ার হোসেনের মুখে। তাকে দেখে আশপাশের কৃষকরাও এখন অতিরিক্ত সার প্রয়োগ না করে মাটি পরীক্ষা করে পরিমাণমতো সার প্রয়োগের কথা ভাবছেন। তা ছাড়া ব্রি ধান-৯২ আবাদের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মাটি পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ব্রি ধান-৯২ এর ফলন আসবে হেক্টরপ্রতি আট মেট্রিক টন।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি টাঙ্গাইল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের স্যারদের পরামর্শে মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সার দিয়েছিলাম। এ জন্য জমির ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আর যারা তাদের নিজেদের মতো করে জমিতে সার দিয়েছেন তাদের জমিতে তুলনামূলকভাবে ফলন হয় অনেক কম। ভাতকুড়া গ্রামের অপর কৃষক মো: আসাদুজ্জামান ও আব্দুল জলিলও বললেন একই কথা।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করলে ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এ ছাড়া হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে কমপক্ষে এক মেট্রিক টন।
এ উপলক্ষে শনিবার দুপুরে ভাতকুড়া গ্রামে কৃষক সমাবেশ ও মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: কামারুজ্জামান। নমুনা শস্য কর্তনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, মাটির উর্বরতার মান সবখানে এক রকম থাকে না। তাই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে যে ফলন ভালো হয়; আমাদের এই তুলনামূলক প্রদর্শনীই তার বাস্তব প্রমাণ। আমরা এই বার্তাটি সারা দেশের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে চাই। তা ছাড়া রাসায়নিক সার আমাদের অমূল্য সম্পদ। এই সারের অপচয় রোধ করতে হবে এবং জানতে হবে সঠিক প্রয়োগ। টাঙ্গাইলে খুব সহজেই নামমাত্র খরচে মাটি পরীক্ষা করা যায় বলে তিনি জানান।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক কার্যালয় আয়োজিত কৃষক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফিল্ড সার্ভিসেস উইংয়ের পরিচালক মো: লিয়াকত হোসেন, টাঙ্গাইল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা উৎপল কুমার, টাঙ্গাইল কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো: দুলাল উদ্দীন, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের টাঙ্গাইল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহসানা আক্তার।


আরো সংবাদ



premium cement