২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা গঙ্গাচড়ার বিনবিনিয়াবাসী

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত গ্রোয়েন বাঁধও হুমকির মুখে, নিশ্চুপ পাউবো
-

নদীতে পানি বাড়া শুরু হতে না হতেই রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দের বিনবিনিয়াবাসী আবার তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা। ভাঙন থেকে রক্ষায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় যে গ্রোয়েন বাঁধ দেয়া হিয়েছিল সেটিও ভেঙে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগÑ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনোভাবেই ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। আর পাউবো জানিয়েছে, সেখানে ভাঙন রক্ষায় একটি প্রকল্প সমীক্ষার পর্যায়ে আছে। এখনো প্রতিবেদন আসেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তার ডান তীরে কোলকোন্দ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বিনবিনা পশ্চিম পাড়ায় ডান তীর রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন ধরেছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশের ঝাড়, জমিজমা আর বসতবাড়ি। প্রায় মাস দুয়েক আগ থেকে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের সহায়তায় স্বেচ্ছায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটিও ভাঙনের মুখে পড়েছে। মেম্বার মনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিনবিনা নারিকেলতল থেকে খৈখাওয়া পর্যন্ত যে বেড়িবাঁধটি ছিল সেটি গতবারের বন্যায় অর্ধেক ভেঙে গেছে। এবার পুরোটাতেই ভাঙন ধরেছে। তিনি জানান, আমরা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে দু’টি পয়েন্টে দু’টি গ্রোয়েন বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তিস্তার পানি বাড়ার সাথে সাথে সেই বালুর গ্রোয়েন বাঁধ দু’টিও ভেঙে যাচ্ছে। মহিলা মেম্বার নারগিছ আক্তার জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে তিস্তায় পানি বাড়ছে-কমছে। কিন্তু ভাঙন চলছে। পানি যদি আর সামান্য বাড়ে তাহলে পুরো এলাকাটি এবার নদীতে চলে যাবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে। এখন খৈখাওয়া অংশে ভাঙন ধরেছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায় তাহলে খৈখাওয়া, পাঙ্গাটারী, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে ভাঙন ছড়িয়ে পড়বে। আউলিয়া বাজার, বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি আমার ফোনও তারা ধরেন না। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গ্রোয়েন বাঁধ দু’টিসহ বেড়িবাঁধটি জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ দিয়ে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন। তা না হলে এই এলাকার চার হাজার বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে পড়বে। হাজার হাজার হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙনের কবলে পড়া পাকার মাথার পূর্ব পাশের মোজাম্মেল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের দিকে দেখে না। আমার বাড়ির একাংশ চলে গেছে। আর অংশ নদীতে যাওয়ার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্থানীয় গোলাম মোস্তফা জানান, এই বাঁধটি ভেঙে গেলে পাশেই খৈখাওয়া এলাকায় অবস্থিত সমবায় ভিত্তিতে গড়ে তোলা ২০০ একর জমির মৎস্য খামার নষ্ট হয়ে যাবে। এতে এই খামারের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫০০ পরিবার জীবিকা নিয়ে হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও এসেছিলেন পরিদর্শনে। আমিসহ এলাকাবাসী তার হাত-পা ধরে অনুরোধ করেছি জিওব্যাগসহ কাজ করার। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো আশ্বাস দেননি।
এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, বিনবিনিয়া এলাকায় একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শনিবার ভাঙন এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি একজন এসও গিয়ে দেখে এসেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement