সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি-সরকার সমর্থক আইনজীবীদের হাতাহাতি

সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের পদ দখলের প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিক্ষোভের সময় সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সাথে ব্যাপক হাতাহাতি, কিল-ঘুষির, হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষে আইনজীবীদের সাথে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আইনজীবী ভোট চোর সেøাগান দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের নেমপ্লেট ভাঙচুর করেন। একই সময় সম্পাদকের কক্ষের দরজা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেন বিএনপি সমর্থকরা।
এ সময় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা বাধা দিলে তাদের সাথে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধস্তাধস্তির সময় সরকার সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী আহত হন বলে জানা গেছে। এ সময় নজরুল ইসলাম প্রামাণিক নামে একজন আইনজীবীর শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় বলে আইনজীবীরা জানান। দীর্ঘ সময় ধরে আইনজীবীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সেøাগান দিয়ে চলে যান। এ সময় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে বেলা ২টার দিকে অবৈধভাবে সম্পাদক পদ দখল করে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে শতাধিক বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষের সামনে এসে ভোট চোর ভোট চোর বলে সেøাগান দেন।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, জয়বাংলা সেøাগান দিয়ে তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে। আমাদের সাহসী নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, স্বঘোষিত সম্পাদক, স্বেচ্ছায় সম্পাদকের কক্ষ থেকে বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একটি মিটিং চলাকালীন বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তারা সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালের নেমপ্লেট ভাঙচুর করে। এ সময় আইনজীবী নজরুল ইসলাম প্রামাণিক গুরুতর আহত হন।
এর আগে বুধবার বেলা ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে অবৈধভাবে সম্পাদক পদ দখল করে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট। এতে কয়েক শ’ আইনজীবী অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্য কলঙ্কিত না করার আহ্বান জানান। প্রতিবাদ সভা শেষে বিক্ষোভ করে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষের সামনে যান।
প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব ফজলুর রহমান বলেন, ভোট ডাকাতি করা, নিশিরাতের এমপি করা কোনো গৌরবের বিষয় নয়। মানুষের শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিম কোর্টেও ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এই সরকারের পতন ছাড়া দেশে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। তিনি বলেন, সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে দেশে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এটা না মানা হলে দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম হবে। রাজপথ উত্তপ্ত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে কোনো সততা আশা করা যায় না। তাদের কোনো আদর্শ নেই। তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত কার্যকরি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, অবৈধভাবে সম্পাদকের পদ দখলের প্রতিবাদে আপনারা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন এবং তার সাথে না বসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর জন্য আমি আপনাদের সাধুবাদ জানাই।
বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, যারা তালা ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকের পদ দখল করেছেন, আইনজীবীরা তাদের ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাস কলঙ্কিত করা হয়েছে। এর জন্য যারা দায়ী তারা বর্তমানে যত ক্ষমতাসীন ব্যক্তি হোন না কেন একদিন তাদের আইনের আওতায় এনে এই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাই বিচার করবেন। তিনি বলেন, দেশে যেভাবে নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। একইভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। আইনজীবী সমাজ কখনোই তা মেনে নেবে না। তিনি অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। বক্তব্য শেষে তিনি আইনজীবীদের সাথে সেøাগান দেন, চোর চোর ভোট চোর। অবৈধ সম্পাদক মানি না মানব না।
আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের ট্রেজারার মো: কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক মো: মাহবুবুর রহমান খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মনির হোসেন, রাগীব রউফ চৌধুরী, রফিকুল হক তালুকদার রাজা, মোহাম্মদ আলী, মনিরুজ্জামান আসাদ, মির্জা আল মাহমুদ, মু: কাইয়ুম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। গণনা করা হয় গত ১৭ মার্চ। নির্বাচনে ভোট গণনায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদক দুইজন এবং চারজন সদস্যসহ মোট আটটি পদে এগিয়ে থাকে। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি, দু’টি সহসভাপতি এবং তিনজন সদস্যসহ মাট ছয়টি পদে এগিয়ে থাকে।
কিন্তু ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর আওয়ামীপন্থী সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল ভোট পুনর্গণনার জন্য একটি আবেদন দিয়ে নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ককে চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক পদত্যাগ করেন। এ জন্য দীর্ঘদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা হয়নি।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের অভিযোগÑ মেয়াদোউত্তীর্ণ কার্যকরী (২০২১-২২) কমিটির আওয়ামীপন্থী সাতজন সদস্য অবৈধভাবে গত ১২ এপ্রিল নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করেন। অথচ তাদের মেয়াদ ১১ এপ্রিল শেষ হয়ে যায়। ওই অবৈধ সাব-কমিটি ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে জোরপূর্বক সমিতির কনফারেন্স রুমের তালা ভেঙে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যালট ছিনতাই করে আব্দুন নূর দুলালকে সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে। পরে বারে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত সাত সদস্য গত সোমবার এক সভায় আব্দুন নূর দুলালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট বারে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।