২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রওশন এরশাদকে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে তৎপরতা

বাজেট অধিবেশনের আগেই দেশে ফিরছেন
-

দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ। আগামী জুনে বাজেট অধিবেশনের আগেই জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হতেও দেখা যেতে পারে। এ ব্যাপারে তার অনুসারীরা তৎপর বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ফুসফুসসহ বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই দম্পতির ছেলে রাগিব আল মাহি সাদ এরশাদও মায়ের সাথেই রয়েছেন। সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি (রওশন এরশাদ) ভালো আছেন। অনেকটা সুস্থ। আসন্ন বাজেট অধিবেশনের আগেই দেশে ফেরার চেষ্টা করবেন।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, তিনি আল্লাহর রহমতে অনেকটাই সুস্থ। তিনি কবে ফিরবেন এখনো ঠিক হয়নি। তবে তিনি শিগগিরই ফিরে আসবেন। তার ফিরে আসা তো ডাক্তারদের ওপর নির্ভর করে, তবে আশা করছি বাজেট অধিবেশনের আগেই তিনি ফিরে আসবেন ইনশা আল্লাহ।
বেশ কিছু দিন ধরেই সরকারের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা মুখর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্বে রয়েছেন রওশন এরশাদ। পার্টিতে প্রভাবশালী অনেক নেতাসহ বড় একটা অংশ রওশন এরশাদের অনুসারী, যারা সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত। বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে রওশন এরশাদ এবং তার অনুসারীরা আওয়ামী জোটে থেকে সরকার ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করছেন। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই রওশন এরশাদের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত। দ্বাদশ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এ অবস্থায় সক্রিয় হয়ে উঠছেন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী একটি অংশ, যারা রওশন এরশাদকে পার্টির রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হতে উৎসাহ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির এই অংশের অনেক নেতাই মনে করেন, পার্টি প্রধান জি এম কাদের সাম্প্রতিক সময়ে কঠোর ভাষায় সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। আগামী নির্বাচনে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিএনপির সাথেও জোট বাঁধতে পারে, এমন সন্দেহও চালু আছে। সবকিছু মিলে সরকার জি এম কাদেরের ওপর সন্তুষ্ট নয় বলে মনে করছেন দীর্ঘ দিন ধরে সংসদে বিরোধীদলীয় আসনে থাকা জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী কিছু নেতা। এ অবস্থায় রওশন এরশাদকে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে চাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহকে তার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।
তবে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গোলাম মসীহ। তিনি বলেন, জি এম কাদের সাহেব পার্টি চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে উনি ভালো বোঝেন। এ ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে চাই না।
রাজধানীর ২৯ মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ওঠার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। তবে গতকাল বিকেলে মিন্টু রোডের বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, গণপূর্তের লোকজন বাউন্ডারির ভেতর বালু-সুরকি রেখেছেন। এগুলো পাশের অন্য বাসার সংস্কারে ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে গণপূর্তের (রমনা উপবিভাগ-১) উপসহকারী প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনটি দীর্ঘ দিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। এই বাসাটি ব্যবহারের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা দেয়ার পর এটি সংস্কার করতে কমপক্ষে ছয় মাস লেগে যাবে।
রওশন এরশাদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে গোলাম মসীহ বলেন, উনি (রওশন এরশাদ) অনেক দিন ধরেই অনুপস্থিত। তিনি আসুক, তখন বুঝা যাবে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, এমনিতেই মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকী জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের নামে কার্যক্রম শুরু করেছেন। তার সাথে পার্টির বেশ কিছু সাবেক নেতাও রয়েছেন। এ অবস্থায় রওশনপন্থীরা সক্রিয় হওয়ায় জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আবার অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন তৎকালীন সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে তার দল। জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের অনুসারী রয়েছে বলে জানা যায়। নির্বাচন সামনে এলেই দুই পন্থী নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেন। তবে গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী পন্থী হিসেবে পরিচিত নেতারাই বেশি প্রভাব খাটিয়েছেন। তারা মূলত রওশন এরশাদপন্থী হিসেবেই পরিচিত। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে টানাপড়েন ছিল। সেটা এক সময় কেটে গেলেও আগামী নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতৃত্ব জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement