১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ

-

আজ সোমবার, ১৬ মে। ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে মারণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ওই দিন সর্বস্তরের মানুষের বজ্রকণ্ঠ দিল্লির মসনদ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মওলানা ভাসানী সেদিন ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব ও এর বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে যে প্রতিবাদ করেছিলেন, তার সেই সাহসী উচ্চারণ বাংলাদেশের মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস্য হয়ে আছে আজো।
জানা যায়, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয়। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে জনতার পদযাত্রা শুরু হয়। হাতে ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে। বেলা ২টায় হাজার হাজার মানুষের স্রোত জেলার গোদাগাড়ীর প্রেমতলী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাত যাপনের জন্য সে দিনের মতো শেষ হয়। মাঠেই রাত যাপন করার পরদিন সোমবার সকাল ৮টায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে।
ভারতীয় সীমান্তের অদূরে কানসাটে পৌঁছানোর আগে মহানন্দা নদী পার হতে হয়। হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন এই লংমার্চে। তারা নিজেরাই নৌকা দিয়ে কৃত্রিম সেতু তৈরি করে মহানন্দা নদী পার হন। কানসাট হাইস্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ভাষণ দেন। এই লংমার্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। ফলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও স্থান পায়। এতে মওলানা ভাসানী এশিয়ার অন্যতম ও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মা আজ পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩০টি নদী বিলুপ্তির পথে। অন্য দিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন পানির স্তর স্থান ভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। আর নগরীতে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যে দেশের বৃহৎ এ অঞ্চলটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। মরুকরণ দেখা দেবে।
এ ব্যাপারে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হকনয়া দিগন্তকে বলেন, ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া ও প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গা-পদ্মা ছাড়াও অন্যান্য ছোট ও মাঝারি নদ-নদীও শুকিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা এখন অনেকটাই মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় আসন্ন।
এনামুল হক বলেন, ভারত সরকার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেবে না, এটা এখন অনেকটা স্পষ্ট। কারণ এত দিনেও তারা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানির প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়নি। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ ভারতের কাছ থেকে আদায়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রাজশাহীতে জনসভা : এ দিকে ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর পাঠানপাড়ায় পদ্মা নদীর পাড়ে লালন মুক্ত মঞ্চে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। নদী ও পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশ এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
এতে উপস্থিত থাকবেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।
বিএনপি : ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণী দিয়েছেন। তে তিনি বলেছেন, ১৬ মে ‘ফারাক্কা দিবস’ আমাদের জাতীয় মুক্তির নিরন্তর সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ থেকে ৪২ বছর আগে আফ্রো, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার অবিসংবাদিত মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে সারা দেশ থেকে লাখো জনতা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিলে অংশ নেয়। ভারতে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার শুরু করা হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওই এলাকায় পানিতে আর্সেনিকসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনা না করে এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভারতকে কয়েক দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়, কিন্তু ভারত সেই সুযোগ নিয়ে অব্যাহতভাবে আজ পর্যন্ত তা চালু রেখেছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে নির্লজ্জভাবে তা মেনে নিয়েছে, ফলে বাংলাদেশের জনগণ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি আরো বলেন, এই বঞ্চনা ও দেশের প্রকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্দশার আশঙ্কায় প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী জনগণকে সাথে নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল করে ভারত সরকারের নিকট প্রতিবাদ করেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট বিষয়টি তুলে ধরেন। তখন থেকে ব্যাপক মানববিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফারাক্কা বাঁধের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচিত হতে থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি আজো ফারাক্কা দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আন্তর্জাতিক আইনকানুন ও কনভেনশনের তোয়াক্কা না করে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীতে একের পর এক বাঁধ নির্মাণে নদীর ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে ভারত একতরফা নিজেদের অনুকূলে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ এখনো পায়নি। এসব নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশে পানির সঙ্কট যেমন তীব্র হচ্ছে, সাথে সাথে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সারা বাংলাদেশ একসময়ে নিষ্ফলা উষর ভূমি হয়ে উঠবে বলে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। সুতরাং ১৬ মে ১৯৭৬, মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল ন্যায্য পাওনা আদায়ের সংগ্রামে জনগণ অকুতোভয় সাহসী পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই প্রতি বছর ১৬ মে ‘ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস’ যেকোনো অধিকার আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে। ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের সব কর্মসূচির তিনি সাফল্য কামনা করেন।
রাজশাহীতে সমাবেশ করবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে লালনশাহ মঞ্চে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া সাত দল ও সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশ শেষে ডা: জাফরুল্লাহর নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ মিছিলসহকারে রাজশাহীর মাদরাসা ময়দানে যাবেন, যেখান থেকে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চ শুরু হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement
কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান

সকল