২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পুতিনকে সরাতে অভ্যুত্থান চলছে, দাবি ইউক্রেনের

ন্যাটোতে যোগদানে ১৮ মে আবেদন করবে ফিনল্যান্ড; খেরসনে রুশ পার্লামেন্টের ভাইস স্পিকার; কিয়েভে ফিরছে ভারতীয় দূতাবাস
-

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরাতে অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশটির সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। সেই প্রস্তুতি বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে পুতিনের পক্ষে অভ্যুত্থান থামানো অসম্ভব। এ ছাড়া ক্যান্সারসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে এমনিতেই দেশ পরিচালনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন তিনি। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেছেন ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা কিরিলো বুদানভ।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে দেশটির সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যাপারটি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে পুতিনের পক্ষে তা থামানো অসম্ভব।’
এ ছাড়া পুতিনের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয় বলে দাবি করেছেন মেজর জেনারেল বুদানভ। সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পুতিনের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ এবং তিনি খুবই অসুস্থ। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তিনি ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।’ দুই দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধে বিভিন্ন ভুয়া খবর ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে এবং একে আখ্যা দেয়া হয়েছে তথ্য যুদ্ধ (ইনফরমেশন ওয়্যার) হিসেবে।
বুদানভের এসব তথ্যও ‘তথ্য যুদ্ধের’ অংশ কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, এসব তথ্য ভুয়া নয়। স্কাই নিউজকে কিরিলো বুদানভ বলেন, ‘এটা আমার চাকরি, আমার কাজ; আমি যদি এসব তথ্য না জানি, তা হলে কে জানবে’। সম্প্রতি অবশ্য পুতিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেসবের মধ্যে একটিতে দেখা যায়, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সাথে হাত মেলানোর সময় কিছুটা কাঁপছেন পুতিন।
তার পরই গুঞ্জন ওঠে, পার্কিনসন্সে ভুগছেন পুতিন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন এই গুজব খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম নিউজ ডট কম ডট এইউ দাবি করেছে, পুতিনের দৈনন্দিন জীবনযাপন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ক্রেমলিন। এ বিষয়ে নিউজ ডট কমের এক খবরে বলা হয়, দেশ এবং বিশ্বের কাছে পুতিনের দৃঢ় ইমেজ গঠন, বিভিন্ন সরকারি বৈঠকে তিনি কতক্ষণ কথা বলবেন, তা নির্ধারণ করাসহ পুতিনের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন ক্রেমলিনের হাতে।
ন্যাটোতে যোগদানে ১৮ মে আবেদন করবে ফিনল্যান্ড
আগামী বুধবার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করতে পারে বলে জানিয়েছেন ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো। তিনি বলেন, ন্যাটোতে স্থায়ী প্রতিনিধি হতে আমরা সম্ভবত বুধবার একটি আবেদন করতে যাচ্ছি। ন্যাটোর সাথে আলোচনা শুরু হলে আমাদের প্রতিনিধিদল তা দেখভাল করবে। খবর তাসের। আজ সোমবার ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবে। এ দিকে আলজজিরার খবরে অনুসারে, গতকাল রোববার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসটো এবং প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন এক যৌথ বিবৃতিতে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য ফিনল্যান্ড আবেদন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আবেদনের বিষয়ে দেশটি তার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাল। ফিনিশ পার্লামেন্ট আগামী দিনে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচিত হবে। তার পরে ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে একটি আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ আবেদন জমা দেয়া হবে, সম্ভবত আগামী সপ্তাহের কোনো এক সময়ে।
এ দিকে ন্যাটোয় যোগ দিলে ফিনল্যান্ড বড় ‘ভুল করবে’ বলে দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। গত শনিবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সাথে ফোনে কথা বলেন পুতিন। এ সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে সামরিক বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতি মেনে আসছিল ফিনল্যান্ড। সম্প্রতি এ নীতি পরিত্যাগ করে দেশটি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে চাইছে।
এ দিকে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার সম্ভাবনার মুখে দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। এর আগে দেশটির রুশ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘রাও (আরএও) নর্ডিক’ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেয়। এর পরই ফিনল্যান্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হলো। ফিনল্যান্ডের সাথে রাশিয়ার দীর্ঘ এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
খেরসনে রুশ পার্লামেন্টের ভাইস স্পিকার
রাশিয়ার পার্লামেন্টের ভাইস স্পিকার আনা কুজনেৎসেভা শনিবার খেরসন সফর করেছেন। তিনি সেখানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন। রুশ গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আনা কুজনেৎসেভা খেরসনের সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের (ভিজিএ) প্রতিনিধি ও স্থানীয় পরিষেবা দফতরগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি খেরসনে খাদ্য, ওষুধ ও শিশু সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি সেখানে আঞ্চলিক শিশু হাসপাতাল ও একটি শিশু সদন পরিদর্শন করেন।
আনা কুজনেৎসেভা স্থানীয় কর্মকর্তাদের বলেছেন, খেরসনে যে যে ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, রাশিয়া সে ঘাটতি পূরণে চিকিৎসক পাঠাবে। রুশ প্রশাসন খেরসনের সব প্রয়োজনে পাশে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার ভাইস স্পিকারের এ সফর রুশ ফেডারেশনে খেরসনের অন্তর্ভুক্তির প্রতি মস্কোর অঙ্গীকারের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সহযোগী ফেলো স্যামুয়েল রামানি। কুজনেৎসেভার সফরের ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত শনিবার রাশিয়া-সমর্থিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর) প্রধান ডেনিস পুশিলিন, ভøাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির সাবেক সম্পাদক আন্দ্রেই তুরচাকসহ রাশিয়ার একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধিদল খেরসন সফর করেন। সফরকালে আন্দ্রেই তুরচাক বলেন, রুশ নাগরিকদের ও খেরসনের অধিবাসীদের আমি এটি বলতে এসেছি যে রাশিয়া এখানে চিরকালের জন্য এসেছে।
দনবাস আক্রমণে গতি হারিয়েছে রাশিয়া : দাবি ব্রিটেনের
সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দনবাসে ব্যাপকভাবে হামলা চালায় মস্কো বাহিনী। সম্প্রতি হামলার তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, দনবাসে রাশিয়ার আক্রমণের ‘বেগ হারিয়েছে’ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে। সবশেষ গোয়েন্দা ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়া গত মাসে আঞ্চলিক সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখেও পড়েছে। খবর বিবিসির। লুহানস্ক ও দোনেস্ক নিয়ে গঠিত দনবাস। ইউক্রেনের এ অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রেণ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া।
কিয়েভে ফিরছে ভারতীয় দূতাবাস
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলায় রাজধানী কিয়েভ থেকে দূতাবাস সরিয়ে নেয় ভারত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আবারো কিয়েভে দূতাবাস ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার টুইট বার্তায় জানিয়েছে, আমরা শিগগিরই ভারতীয় দূতাবাস রাজধানী কিয়েভে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছি। আগামী ১৭ মে কিয়েভে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। খবর সিএনএনের। রুশ বাহিনীর হামলায় ভারতীয় দূতাবাস গত ১৩ মার্চ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসোতে সরিয়ে নেয়। শুধু ভারত নয় যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশির ভাগ দেশ নিজেদের কার্যক্রমের পরিধি কমিয়ে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement