তথ্যের ঘাটতির পাশাপাশি চলছে অপতথ্যের ব্যাধি
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
কোভিডের প্রভাব নিয়ে সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রভাবগুলো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারের কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। আগে তথ্যের ঘাটতির কথা বলেছি, এরপর তথ্য নৈরাজ্য ছিল, এখন অপতথ্যের ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যে পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাদের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি আয়ও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক হার কমিয়ে দিতে হবে। যাতে বাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস পায়।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কর্তৃক ‘বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে অতিমারি কী প্রভাব ফেলবে?’ শীর্ষক গতকাল ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে একটি অবহিতকরণ ও পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় এই অভিমত প্রকাশ করেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নির্ধারিত বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ ড. রুমানা হক, নির্বাহী প্রধান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) অ্যাডভোকেট সাইদা রিজওয়ানা হাসান, গণসাক্ষরতা অভিযান প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ডা: মালেকা বানু, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা জাহান, সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটি (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, হরিজন ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজু বাশফোর, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
উপস্থাপনায় ড. দেবপ্রিয় বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে এসডিজির সূচকগুলো কী অবস্থায় আছে, তা জানার মতো পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব আছে। এখন আর তথ্যের ঘাটতি নয়, বরং তথ্যের অন্ধত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। সামনে নির্বাচন, তাই মূল্যস্ফীতির ইস্যু রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে ৯টি পরামর্শ দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এগুলো হলো টাকার মান স্থিতিশীল রাখা, সুদের হার সমন্বয় করা, নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমানো, নতুন কর্মসংস্থানে করপোরেট কর হ্রাস, দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কর্মসূচি বিস্তৃত করা, বিদ্যুৎ জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মতো ভর্তুকির খাতগুলো পুনর্বিন্যাস করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃত করা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) টাকা খরচে সাশ্রয়ী হওয়া এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নগর এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা আরো প্রসারিত করা প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষিতে, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি সরকারকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।
অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সাম্প্রতিক বছরে পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য বাজেটে বরাদ্দ অনেকখানি কমেছে।
অধ্যাপিকা ড. রুমানা হক বলেন, সরকারের উচিত স্বাস্থ্য খাতে যে বাজেট দেয়া হয় তার সঠিক ও গুণগত মানের বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে।
ডা: মালেকা বানু বলেন, অতিমারিতে জেন্ডার বৈষম্য অনেক বেড়েছে এবং সুশাসনের অভাব এই সমস্যাটিকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
হাসিন জাহান বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ওয়াটার, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (ওয়াশ) অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, ওয়াশের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের আগামী বাজেটে আরো বেশি আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
রাজু বাশফোর বলেন, যাদের ঘর নেই, ভূমি নেই তাদেরকে ঘর ও ভূমি দেয়ার কথা। কিন্তু এখানে উল্টো, যাদের ঘর আছে, ভূমি আছে, তারা ঘর ও ভূমি পাচ্ছে।
খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারী প্রতিবন্ধী শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না।