২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্বে দাম বৃদ্ধি ও স্ক্র্যাপের দু®প্রাপ্যতা দায়ী বলছেন উৎপাদকরা

অস্থির রডের বাজার নির্মাণশিল্পে উদ্বেগ

-

রডের বাজার আবার অস্থির। উৎপাদকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি দু®প্রাপ্যতার কারণে স্থানীয় বাজারে রডের দাম বাড়ছে। চট্টগ্রামের বৃহৎ মিলগুলো এক-দেড় হাজার টাকা বাড়ালেও ঢাকার মিলগুলো টনপ্রতি তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বহুল আলোচিত ওয়ান- ইলেভেনের সময় খুচরা পর্যায়ে প্রতিটন সর্বোচ্চ ৮৪ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল রডের দাম। বর্তমানেও খুচরা পর্যায়ে অনেকটা ওই সময়ের দাম ছুঁই ছুঁই। ফলে এরই মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নির্মাণশিল্পে। এই অবস্থায় দেশের নির্মাণশিল্পে স্থবিরতার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের ধীরগতিরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী গত বছরের তুলনায় এখন ৬০ গ্রেডের এম.এস রড ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে বেড়েছে দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে রড উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, কেমিক্যালসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারের সাথে স্থানীয় বাজারেও স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যায়। টনপ্রতি ৫২০ ডলারে যে জাহাজ বিক্রি হচ্ছিল এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা সাড়ে পাঁচ শ’ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতেও লোহার দাম বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে প্রতিটন স্ক্র্যাপ ৫৪ হাজার ৬শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৫৩ হাজার ৩ শ’ টাকা।
এর আগে গত অক্টোবর-নভেম্বরে দেশের বাজারে সর্বোচ্চ প্রতি টন রড ৮১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ডিসেম্বরে এসে বাজার কিছুটা কমতে থাকে। চলতি মাসের শুরুতে দেশে রডের দাম ৭৬ হাজার টাকায় নেমে আসে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে রডের দাম আবারো বাড়তে শুরু করে। গতকাল ভালো মানের ৬০ গ্রেডের রড টনপ্রতি মিল গেটে কোম্পানি ভেদে ৭৫-৭৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বাজারে ৮১ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশে রডের দাম টনপ্রতি মিল গেটে ৮০ হাজার টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৮৪ হাজার গিয়ে ঠেকেছিল।
দেশের অন্যতম রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম ৫৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। একই সাথে স্থানীয় বাজারেও স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বিশ^ব্যাপী স্ক্র্যাপের সঙ্কট দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় চীন স্ক্র্যাপ রফতানি করত। কিন্তু গত অক্টোবর হতে চীন স্ক্র্যাপ রফতানির পরিবর্তে বিশে^র নানা জায়গা থেকে নিজেরা স্ক্র্যাপ কেনা শুরু করেছে। ফলে বাজারে রডের কাঁচামালের সঙ্কট চলছে। করোনা বাড়ার সাথে সাথে স্ক্র্যাপ আমদানিতে ব্যবহৃত কনটেইনার ও বাল্ক জাহাজের ফ্রেইট বাড়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। কেএসআরএম ব্র্যান্ডের রডের দাম গতকাল টনপ্রতি মিল গেটে ৭৭ হাজার ৫ শ’ টাকা ছিল বলে তিনি জানান।
গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিদিনই স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে। গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববাজারে ভালো মানের স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৫৯০ ডলার। সাধারণ স্ক্যাপের দাম ছিল ৫১০ ডলার। নভেম্বর মাসে তা কমে ভালোমানের স্ক্র্যাপ ৫৫০ ডলারে এবং সাধারণ স্ক্র্যাপ ৫০০ ডলারে নেমে এসেছিল। এখন ফের বেড়ে ৫৮০ ডলারে ঠেকেছে। তা ছাড়া স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম টনপ্রতি ৫২০ ডলার থেকে বেড়ে সাড়ে ৫শ’ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে স্ক্র্যাপ জাহাজের সঙ্কট যেমনই আছে, তেমনি বিশ^ব্যাপী কনটেইনারের সঙ্কট এবং আমদানি ব্যয় ও সময় বেড়েই চলেছে। আগে এলসি খোলার দেড় মাসের মধ্যে কাঁচামাল দেশে চলে আসত, কিন্তু এখন ৩-৪ মাস লেগে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রডের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোল্ডেন ইস্পাতের দাম টনপ্রতি এক হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।


আরো সংবাদ



premium cement