২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নিখোঁজ জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজারের মেইল

জেদ্দায় স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ বিমানের ক্রু আটক

-

সৌদি আরবের জেদ্দায় প্রায় ৩ কোটি টাকার স্বর্ণ ও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু রুহুল আমিন শুভ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে সৌদি পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। গত বুধবার দুপুরে (স্থানীয় সময়) জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন ঘটনা ঘটে বলে বিমানের বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার পর পরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জেদ্দার স্টেশন ম্যানেজার মেইল পাঠিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। এর পরই তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়।
জেদ্দা বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, শুভ বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইটের (বিজি-৪০৩৬) কেবিন ক্রু ছিলেন। বুধবার ঢাকাগামী ফ্লাইটে উঠার আগে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে যাওয়ার মুহূর্তে ইমিগ্রেশন পুলিশ তার গতিবিধি সন্দেহজনক দেখে আটক করে। এরপর তার সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে তারা। এ সময় পুলিশ তার ব্যাগ থেকে ৩ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করে। এসবের বৈধ ডকুমেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে কেবিন ক্রু শুভ তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এর পরই তাকে স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বলাকা ভবনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে জানান, ঢাকা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ক্যাপ্টেন রেজাউলের নেতৃত্বে ফ্লাইটটি (বোয়িং-৭৭৭) জেদ্দার উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। সেটি জেদ্দায় পৌঁছে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে। ওই ফ্লাইটে যাত্রীদের সেবায় শুভসহ ১০জন কেবিন ক্রু নিয়োজিত ছিলেন। ফিরতি ফ্লাইটটি মঙ্গলবার রাতে জেদ্দা থেকে ছেড়ে পরদিন বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে জেদ্দা থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগেই বিমানবন্দরে ওই ফ্লাইটের কেবিন ক্রু শুভ স্বর্ণসহ পুলিশের হাতে আটক হলেও জেদ্দার স্টেশন ম্যানেজার কেবিন ক্রু শুভকে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল পাঠান। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ আটক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্ত হওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাস্টমার সার্ভিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইটের একজন কেবিন ক্রুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এমন তথ্য উল্লেখ করে স্টেশন ম্যানেজার আমাদেরকে একটি মেইল পাঠিয়েছেন। যার কারণে ওই ফ্লাইটের ১০ কেবিন ক্রুর পরিবর্তে শেষমেশ ৯ জনকে নিয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুভ কি আসলেই স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ ধরা পড়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে ফ্লাইটে উঠতে পারেনি সে ব্যাপারে আমরা এখনো অফিসিয়ালি রিপোর্ট পুরোপুরি পাইনি। তিনি বলেন, সৌদির আইনকানুনের বিষয়ে তো আপনারা সবই জানেন। কোনো কিছু ঘটলেও তারা সহজে সেটি প্রকাশ করতে চান না। এমন ঘটনা যদি সিঙ্গাপুরের ফ্লাইটে ঘটতো, তাহলে সাথে সাথে আমরা খোঁজ নিয়ে বলে দিতে পারতাম আসলে কী ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সৌদির ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
জানা গেছে, কেবিন ক্রুদের শিডিউলিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন গ্রুপ-৬ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ডিউটি রোস্টার) মো: শাকিল। তার পছন্দের একজন ছিলেন কেবিন ক্রু রুহুল আমিন শুভ। এসব নিয়ে বিমানের শিডিউলিং শাখায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। এ দিকে স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচার চক্রে শুভর সাথে আর কারা জড়িয়ে পড়েছেন তাদের শনাক্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুভর ঘটনার পর থেকে কেবিন ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান।


আরো সংবাদ



premium cement