২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাইডলাইন তৈরি হলো ওমিক্রনের

শনাক্ত ১৫৫২৭ মৃত্যু আরো ১৭
-

ওমিক্রন শনাক্ত বেশি হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ওমিক্রনের গাইডলাইন তৈরি করেছে। শিগগিরই স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নতুন গাইডলাইন সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, ওমিক্রনের অন্য উপসর্গ কী আছে তা বের করতে কাজ চলছে। তিনি বলেন, তারপরও বলব, করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক করোনা রিপোর্টে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৫২৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। সারা দেশে মোট ৪৯ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে এর ৩১.৬৪ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে এবং শনাক্তের হার ছিল ৩২.৪০ শতাংশ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ২৬ দিনে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজারের কিছু বেশি। দেশে ৮৬০টি পরীক্ষাগারে আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে। এই পরীক্ষায় এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়। কিন্তু র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ফলস পজেটিভ রিপোর্টও আসে।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে টিকা কর্মসূচি কাজ করছে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে ৯ কোটি ৫৪ লাখের বেশি মানুষকে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ কোটি ৫৭ লাখের বেশি মানুষ। বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ১২ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ। অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত এক কোটি ৩৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থীকে। স্কুলগুলোতে টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে সমস্যা নেই। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ চাহিদা ঠিকমতো স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে পৌঁছে দিলে সে অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করা হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রতিরোধে টিকা নেয়া, সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহার করা, নিয়মিত হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রাত্যহিক কাজ করা সম্ভব হলে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আবেদন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কোনো অবস্থাতেই শিথিলতা দেখানো যাবে না। রোগীর সংখ্যা বাড়লে চাপ বাড়বে। আমাদের যে সীমিত সম্পদ আছে, তার সর্বোত্তম ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
গতকাল সকাল পর্যন্ত এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায় তাদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন এবং বাকিরা নারী। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে পাঁচজন। ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে মারা গেছে তিনজন।
গতকাল সারা দেশে যে ১৫ হাজার ৫২৭ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে এর মধ্যে ৮ হাজার ২৫৯ জনই রাজধানীর। রাজধানীতে একই সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৩টি। রাজধানীতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯.১০ শতাংশ। ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে ধীরে ধীরে করোনা শনাক্ত বাড়ছে।
রাজশাহীতে একদিনে শনাক্ত ৩৫৭
রাজশাহী ব্যুরো জানান, সংক্রমণের দিক থেকে রেড জোনে (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) থাকা রাজশাহীতে একদিনে ৩৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে বর্তমানে রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গণমাধ্যমকে জানান, মৃত ব্যক্তি করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ৬০ বছরের মধ্যে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন।
এ দিকে মঙ্গলবার রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৭৯ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১১৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ৪৬২ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২৪০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। অর্থাৎ একদিনে ৬৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে রাজশাহী জেলায় বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।
চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ২
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় জোড়া মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৫৫ জন। সাম্প্রতিক সময়ে এটিই সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর মধ্যে এক হাজার ৬০ জনই নগরের। বাকি ৩৯৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। শনাক্তের হার ৩৪.১৩ শতাংশ। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত আক্রান্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৯১৫ জন। মোট মৃত্যু এক হাজার ৩৪৮।
মেহেরপুরে বাড়ছে সংক্রমণ
মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরে গত কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের উপরে। গেল মঙ্গলবার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন টেস্টের জন্য ৩৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে শনাক্ত হয়েছে ১৮ জন রোগী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক না পরার কারণে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা এখন ৬১ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ জন, গাংনী উপজেলায় ১০ জন এবং মুজিবনগর উপজেলায় ১১ জন রোগী রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে চারজন। গত তিন দিনে নতুনভাবে ৪১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৬২ জন, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন লাখ তিন লাখ ৭৯ হাজার ১৫ ও বুস্টার ডোজ সম্পন্ন করেছে পাঁচ হাজার ১৩৩ জন।


আরো সংবাদ



premium cement