২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বেগমপাড়ার মালিকদের তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না : দুদক চেয়ারম্যান

-

কানাডায় বেগমপাড়ায় যেসব বাংলাদেশী নাগরিকের বাড়ি রয়েছে, তাদের তালিকা বারবার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কানাডার বেগমপাড়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তাদের কাছে তালিকা আছে। ওই তালিকা নিয়ে কাজ চলছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কানাডায় বেগমপাড়ায় কাদের বাড়ি রয়েছে, এ বিষয়ে বার বার তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না। যিনি এ কথা বলেছিলেন, তার কাছ থেকে তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না, আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব? তালিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তো আমাদের কোনো ম্যাকানিজম নেই। আমরা তালিকা পেলে অবশ্যই দেখব। যতটুকু পেয়েছি, তা নিয়ে কাজ করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, একটি বিষয় হচ্ছে মানিলন্ডারিং বিষয়ে যত উন্নত দেশই হোক তথ্য দিতে চায় না। কারণ তাদের দেশে টাকা যাচ্ছে। তারা বলে মামলা হলে তথ্য দেবো। কিন্তু আমাদের মামলা দায়ের করার জন্যই ওই তথ্য প্রয়োজন। কোনো দেশই প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছে না।
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় শত শত বাংলাদেশীর টাকায় গড়ে উঠেছে অভিজাত পল্লী, যা বেগমপাড়া নামে পরিচিত। অর্থ পাচারকারীদের বেশির ভাগ আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর রুল জারি করেছিলেন উচ্চ আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশীদের তালিকা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। এরপর কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয়কারী বাংলাদেশীদের তালিকা চেয়ে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারো চিঠি দেয় দুদক।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় দুদক থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, ব্যাংক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত তার মূলধন হারানোর ফলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এ দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশী নাগরিকের নামও উঠে এসেছে। এই ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। এতে একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে, যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে।
চিঠিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশীদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরবরাহ করলে কমিশন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারবে। এ অবস্থায় ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশী নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা আমাদের সব দূতাবাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কি না তা জানানোর জন্য কমিশনের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কানাডায় টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছে এ রকম ২৮টি ঘটনা আছে। তবে এর মধ্যে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন। বাকিরা সরকারি কর্মচারী ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী।


আরো সংবাদ



premium cement