১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রায়

দুই তরুণীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের দায়ে কবিরাজের ১৪ বছর কারাদণ্ড

-

কবিরাজি চিকিৎসার নামে দুই তরুণীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে এক ভণ্ড কবিরাজকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো: জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম আল-আমিন ওরফে আকিল সরদার ওরফে আকিল কবিরাজ (৬০)। তিনি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই গ্রামের আবদুল বারী ওরফে ঝোলন সরদারের ছেলে। রায় ঘোষণাকালে অভিযুক্ত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
কবিরাজি চিকিৎসার নামে আসামি আল-আমিন গ্রামের নারীদের বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছিলেন। সবশেষ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় পৃথক মামলা হয়। এরপর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। বুধবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। আর ধর্ষণের ঘটনায় নাটোরের নারী ও শিশু আদালতে অভিযুক্ত কবিরাজের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা বিচারাধীন। রায় ঘোষণার পর রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইসমত আরা সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উদ্ধৃত করে পিপি ইসমত আরা বলেন, এ ঘটনাটি ২০১৫ সালের। বিষয়টি পরে প্রকাশ পাওয়ায় ভুক্তভোগী দুই তরুণীর মধ্যে একজনের বাবা ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাদি হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোয় নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, তার মেয়ের সাথে স্থানীয় এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এতে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ সুযোগে এলাকার ভণ্ড কবিরাজ তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বশে আনে। তার কাছে কবিরাজি চিকিৎসা করলে আবারো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলে প্ররোচিত করেন। এ সময় তসলিমা খাতুন নামে স্থানীয় এক প্রতিবেশী নারীও জানান, এই কবিরাজ ঠিকই বলছেন। কবিরাজের কথামতো চিকিৎসা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
একপর্যায়ে তার মেয়েকে গোপনে বাড়িতে ডেকে নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার নামে ধর্ষণ করেন এবং গোপনে মোবাইলে তার সেই ভিডিও ধারণ করে রেখে দেন। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই ওই কবিরাজ ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার মেয়ের সাথে জোর করে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিল। কিন্তু প্রতারিত ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরও ভিডিও ফাঁস হওয়ার ভয়ে তার মেয়ে মুখ খোলেনি। এরপর তার মেয়ের এক বান্ধবীও কবিরাজের লালসার শিকার হন।
পরে ওই ভণ্ড কবিরাজ দুই তরুণীকেই এক সাথে তার ঘরে ডাকেন। কিন্তু অস্বীকৃতি জানানোয় কবিরাজ তার মেয়ে ও অপর তরুণীর সেই গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপরই পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনা জানতে পারেন। তখন দুই তরুণীর মধ্যে একজনের বাবা বাদি হয়ে অভিযুক্ত আল-আমিনের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করেন।
অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বলেন, এ মামলায় তসলিমা খাতুনসহ দু’জনই আসামি ছিলেন। তবে তদন্ত শেষে পুলিশ একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। পরে মামলাটি নাটোর থেকে নিষ্পত্তির জন্য রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে মামলার বাদি ও দু’জন ভুক্তভোগীসহ মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরো জানান, রাজশাহীর আদালতে শুধু ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিচার হলো। ধর্ষণের জন্য মামলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারার অংশটির বিচার চলছে নাটোরের আদালতে। ওই অংশটুকুর রায় এখনো হয়নি। মামলা একটি হলেও ধারা পৃথক হওয়ায় বিচার দুই আদালতে চলছে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement