২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা

৮ সহস্রাধিক মার্কিন সেনা সতর্ক অবস্থায়

পশ্চিমা নেতাদের সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা ; ইউরোপীয় নেতাদের সাথে বাইডেনের ভিডিও কনফারেন্স; ফ্রান্সে মিলিত হচ্ছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা; রাশিয়ার চাওয়া নিরাপত্তা গ্যারান্টির জবাব চান ম্যাক্রোঁ
-

ইউক্রেন ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৮ হাজার সৈন্যকে স্বল্প সময়ের নোটিশে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। পেন্টাগনের বরাতে গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে জানানো হয়, সৈন্যদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, তবে তাদের ইউরোপে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আজ বুধবার মিলিত হচ্ছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। রাশিয়ার চাওয়া নিরাপত্তা গ্যারান্টির জবাব চেয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে মোতায়েনের প্রস্তুতির এ নির্দেশ জারি করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। ইউক্রেনে সম্ভাব্য রাশিয়ান আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছিল ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্সকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে। তবে অন্য যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ রয়েছে তাদের। কিরবি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে তার বাহিনীর প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্স কাজ শুরু করা মাত্রই যেন তারা সমর্থন দিতে পারে সেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিরবি জানান, এখন ন্যাটো রেসপন্স ফোর্সে প্রায় ৪০ হাজার সেনা আছে।
এর আগে সোমবার সিএনএন জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন পূর্ব ইউরোপে পাঠাতে চায় এমন নির্দিষ্ট সামরিক ইউনিট বাছাই করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্স মোতায়েনের সময় বা অন্য কোনোভাবে নিরাপত্তার পরিবেশ বিঘিœত হলে, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত অতিরিক্ত ব্রিগেড, সেনা, লজিস্টিক, চিকিৎসা, যুদ্ধজাহাজ, গোয়েন্দা নজরদারি, অনুসন্ধান, পরিবহন এবং সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে বলে জানিয়েছেন কিরবি। তবে তিনি মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করা হবেই এমনটা নিশ্চিত করে বলেননি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের শুধু এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, যেকোনো প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি আছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি যৌথ কৌশল নির্ধারণ। আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসসহ ন্যাটোর বেশ কিছু সদস্য এরই মধ্যে পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ বিমান ও রণতরী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভিডিও ফোনকলে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রয়েজ দুদা, ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা উরসুলা ফন ডের লিয়েন ও চার্লস মিশেলের সাথে কথা বলেন। পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমরা খুবই ভালো আলোচনা করেছিÑ ইউরোপের সব নেতাই একইসুরে কথা বলেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ক্রমেই বেড়ে চলা রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। ইউক্রেইনে রাশিয়া আর কোনো ধরনের আগ্রাসন চালালে মিত্ররা অবশ্যই তাৎক্ষণিক জবাবে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপ করবে।
সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের সদস্য ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনা কমান্ডার ফ্রেডরিক হজেস বলেন, এটা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র একক সিদ্ধান্তে কিছু করছে না বরং তারা এনআরএফে সেনা সরবরাহ করছে, সার্বিকভাবে ন্যাটোর প্রেক্ষাপটে থেকে।
এ দিকে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা নেতাদের সাথে আলোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ভার্চুয়াল বৈঠকে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল, ইউরোপিয়ান কমিশন ও ন্যাটো নেতাদের সাথে। সোমবার ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতারা একমত হয়েছেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়া আরো অনুপ্রবেশ ঘটালে মিত্রদের অবশ্যই নিষেধাজ্ঞার একটি অভূতপূর্ব প্যাকেজসহ দ্রুত প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে হবে। এর আগে ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবারের মধ্যে ইউক্রেন ছাড়ার এই প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তের চার হাজার মাইলেরও বেশি এলাকাজুড়ে সেনা পাঠিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কার মধ্যেই মস্কোর তরফে একটি নৌমহড়ার ঘোষণাও এসেছে। যুদ্ধ ট্যাংক, সেনা ও অন্যান্য সামরিক যান বহন করতে সক্ষম ছয়টি রাশিয়ান ল্যান্ডিংশিপ গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরের পথে যাত্রা করে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দিলে দেশটির দক্ষিণ উপকূলের এমন শক্তিশালী অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারে মস্কো।
ফ্রান্সে মিলিত হচ্ছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মিলিত হচ্ছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। আজ বুধবার সেখানে ফরাসি ও জার্মান কর্মকর্তাদের সাথে তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা। খবরে বলা হয়, ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য নরম্যান্ডি ফরম্যাটের এই বৈঠকে চার দেশের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। নরম্যান্ডি ফরম্যাট হচ্ছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ ঠেকাতে জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইউক্রেন; এই চার দেশের একটি জোট। ২০১৪ সালের ৬ জুন এ জোট গঠিত হয়।
রাশিয়া নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি চেয়েছে তার জবাব দিন : ইউরোপকে ম্যাক্রোঁ
রাশিয়া পাশ্চাত্যের কাছে নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি চেয়েছে সে ব্যাপারে জবাব দেয়ার জন্য ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি ইউক্রেন সঙ্কটকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা প্রশমনেরও আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ বলেছেন, রাশিয়াকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়া হবে কি না সে ব্যাপারে ইউরোপকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এই ন্যাটো জোট আর পূর্বদিকে অগ্রসর হবে না বলে গত মাসে এই জোটের কাছে গ্যারান্টি চেয়েছে রাশিয়া। তবে এ রকম কোনো নিশ্চয়তা দিতে অস্বীকার করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। সোমবার এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউক্রেন সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এই উত্তেজনা কমাতে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে কথা বলবেন বলেও এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে।
জাপানিদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত
ইয়েনি সাফাক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার জাপানের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান প্রশাসন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা কার্যকর করা হবে বলেও জানানো হয়। সোমবার জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় তারা এমন সিদ্ধান্তে যাচ্ছে। এ সময় আরো জানানো হয়, জাপান সবসময় অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখছে। যেকোনো প্রয়োজনে তারা ইউক্রেন সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সহযোগী রাষ্ট্রের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলেও জানানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement