২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘন কুয়াশা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আরো দুই দিন

তীব্র শীতে কাহিল দরিদ্ররা
-

সারা দিনই আকাশ মেঘলা, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে কয়েক জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। তীব্র শীতের মধ্যে গতকাল রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে আবহাওয়ার চিত্র এমন। মাঘের প্রথম ভাগের এমন বৃষ্টিতে কমছে দিনের তাপমাত্রা। মাঘের মধ্যে দেশের আট বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া অফিস অবশ্য বলছে, শৈত্যপ্রবাহ আপাতত নেই, তবে কুয়াশার দাপট আর উত্তুরে হাওয়ায় শীতের অনুভূতি একটু বেশি হচ্ছে। এমন আবহাওয়া আরো দুয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তীব্র শীতের পাশাপাশি কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাসে নাজুক অবস্থায় পড়েছে উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলার দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা কাহিল।
গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল শ্রীমঙ্গল ও সীতাকুণ্ডে দেশের সর্বনিম্ন ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, “সোমবারও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকবে। আগামী তিন দিনে রাতের তাপমাত্রা কমবে; বৃষ্টিও কমে আসবে। বৃষ্টির প্রভাব কেটে গেলে ২৫ জানুয়ারির পর ফের তাপমাত্রা কমতে থাকবে।” এবার মাঘের শুরুতে পাঁচ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলে তিন-চার দিন ধরে। মাসের শেষ দিকে ফের শীতের প্রভাব বাড়বে বলে আভাস দেন এ আবহাওয়াবিদ। এ দিকে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ মেঘলা, সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি দুপুর পর্যন্ত। ঢাকাতেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত তিন দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। তবে কোনোটিই তিন-চার দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন।
দিনাজপুরে ছিন্নমূলদের নাকাল অবস্থা
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত দিনাজপুর। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলা দিনাজপুরে তীব্র শীতের প্রভাবে বেড়েছে শীতজনিত রোগ। ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া ও নিওমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তীব্র শীতে ছিন্নমূল মানুষের নাকাল অবস্থা।
গতকাল সারাদিন দিনাজপুর অঞ্চলে সূর্যের দেখা যায়নি। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভাষ্য মতে, সকালে এই হিমেল বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় তিন থেকে চার কিলোমিটার। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই গতিবেগ বেড়েছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, দিনাজপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৮৭ শতাংশ; বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার। গত শনিবার এই তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া লোকদের পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষের অবস্থা আরো করুণ। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে তারা দিনাতিপাত করছে। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ ত্রাণ বিতরণ করলেও অভাবি মানুষের তুলনায় তা অপর্যাপ্ত।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের আরো বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। ফলে পুনরায় আরো একটি শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, তাপমাত্রা বাড়লেও বাতাসের প্রভাবেই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী দুই দিন এই অবস্থা চলতে পারে।
এদিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় হাসপাতালগুলোতে ব্যাপক হারে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে গত দুই দিনে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিভিন্ন স্থানে আলুর লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে লেটব্লাইট থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
খুলনায় জনজীবন বিপর্যস্ত
খুলনা ব্যুরো জানায়, গত দুই দিন তীব্র শীত ও কুয়াশায় খুলনার জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। এ সময়ে সূর্যের দেখা মেলেনি বলা চলে। হাড় কাঁপানো শীতে দরিদ্র মানুষরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। শীত ও ঘন কুয়াশার সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মানুষের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল সারাদিন খুলনা ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ছিল কম। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামলে রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। নগরীর দোকানপাটেও উপস্থিতি কম। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যানবহন চলাচল করেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। রাস্তায় মানুষ কম বের হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ী এবং রিকশাসহ যানবাহন চালকরাও বিপাকে পড়েন। সবজি বিক্রেতা আলমগীর জানান, কুয়াশার কারণে মানুষজন বাইরে বের হচ্ছে না, এ কারণে অর্ধেক সবজি বিক্রি হয়নি। মাছ বিক্রেতা উৎপল বিশ^াস জানান, লোকসানে মাছ বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। ইজিবাইক চালক হারুন বললেন, গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলেই মালিককে দিনে ৫০০ টাকা দিতে হয়। গত দুই দিন রাস্তায় যাত্রী তেমন ছিল না। ফলে খুব কষ্টে দিন চলেছে।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, গতকাল রবিবার খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি। তবে ঘন কুয়াশা ও মাঝে মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে শীত একটু বেশি অনুভব হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে মঙ্গলবার নাগাদ ঘন কুয়াশা কেটে যাবে।
চৌগাছায় শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, চৌগাছায় কনকনে শীতে নিম্ন ায়ের মানুষের এখন চরম দুর্ভোগ। সূর্যের দেখা মেলেনি দুদিন। ঘন কুয়াশা চারপাশজুড়ে ওড়ছে ধোয়ার মতো। যানবাহনগুলো সারা দিন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ঘন কুয়াশা আর ঠা-া বাতাসে দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। শীতের মাঝেও পানিতে ভিজে ইরি ধানের চারা রোপণের কাজ করতে হচ্ছে তাদের। কাজের ফাঁকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে চৌগাছায় ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা কমছে। গত শুক্রবার থেকে দিনে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া রাতের তাপমাত্রা আরো কম থাকছে। এদিকে প্রতি বছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও এবার তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
নওগাঁয় বৃষ্টিতে দুর্ভোগ
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ গতকাল সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শীতের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতজনিত নানা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। জেলার সদর হাসপাতালসহ ১০উপজেলার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে রোগীর ভিড় লক্ষ্যনীয়। ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন

সকল