২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাল ব্যান্ডরোলে বিড়ি ব্যবসা জমজমাট

সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব
-

জাল ব্যান্ডরোলে বিড়ির ব্যবসা চলছে। দীর্ঘ দিন ধরে একটি সিন্ডিকেট এই ধরনের জাল জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। এদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ার মতো নয়।
তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিড়ি/সিগারেটের অবৈধ কারখানা কেন বন্ধ ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আইন ভঙ্গ করে কার্যক্রম চালানো বিড়ি-সিগারেটের কারখানা অবিলম্বে চিহ্নিত ও বন্ধ করতে এবং সেসব কারখানায় উৎপাদিত তামাকপণ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইন ও বিধিবিধান না মেনে বিড়ি-সিগারেটের বেআইনি উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে মাদকদ্রব্য ও নেশাবিরোধী কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পারভীন আক্তার গত ১০ ডিসেম্বর রিটটি করেন।
আদালত পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, ন্যাশনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল সেলের সমন্বয়ক, প্রধান বয়লার পরিদর্শক এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শকের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন। আইন ও বিধিবিধান না মেনে বিড়ি-সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না, রুলে তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার প্রায় ৭২টি বিড়ি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করেছে। এসব কোম্পানির বিড়ি বিভিন্ন মার্কেটে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের হাটবাজারের বিভিন্ন নামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে এসব বিড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল, বিরল, দিনাজপুর সদরের বিভিন্ন হাটবাজারে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া কোম্পানির জাল ব্যান্ডরোল লাগানো বিড়ি এবং ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভ্যাট ট্যাক্স ও কাস্টমস ডিপার্টমেন্টের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ভুয়া কোম্পানির বিড়ি প্যাকেটের গায়ে জাল ব্যান্ড লাগিয়ে উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুরের বিভিন্ন মার্কেটে বিড়ি বিক্রি করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একইভাবে সারা দেশে বিড়ি শিল্পের চিত্র একই রকম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিড়ি প্রতি প্যাকেটের মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৮ টাকা। কিন্তু ভুয়া কোম্পানিগুলোর বিড়ি প্যাকেটে জাল ব্যান্ডরোল লাগানো থাকে। তার মূল্য ৯ টাকা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত বিড়ি কোম্পানিগুলো।
অপর দিকে যেসব কোম্পানি সরকারকে রাজস্ব প্রদান করে বিড়ি বাজারজাত করে আসছে, সেসব কোম্পানি প্রায় বন্ধের দিকে। এতে করে কয়েক লাখ বিড়ি শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, ভুয়া বিড়ি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শিগগিরই এই শিল্পের সাথে জড়িত প্রকৃত বিড়ি শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে পথে বসবে। বংপুর বিড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ডিনার বলেন, ভুয়া কোম্পানির কারণে প্রকৃত বিড়ি শিল্পের মালিকরা আজ পথে বসেছে। ইতোমধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিড়ি শ্রমিক ও মালিক পক্ষের দাবি বিড়ির ব্যান্ডরোল পোস্ট অফিসের কোড বিক্রি না করে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমে বিক্রি করলে অনেকটা দুর্নীতি কমে আসবে। এতে করে প্রকৃত বিড়ির কোম্পানির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত কম হবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement