১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিমানের ১৭ পাইলট ও ৭০ কেবিন ক্রু করোনা পজিটিভ

ক্যানটন ও হংকং রুটে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ
-

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত পাইলট ও কেবিন ক্রুরা প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১৭ পাইলট ও ৭০ কেবিন ক্রু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো পাইলট ও কেবিন ক্রু ফ্লাইটে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের পর জানতে পারছেন, তিনি করোনা পজিটিভ। এরপর ফ্লাইটে না গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজ বাসায়। তবে আক্রান্ত পাইলট ও কেবিন ক্রুদের সবাই ভালো আছেন, স্বাভাবিক আছেন। এর মধ্যে যাদের ১৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ আবার নিয়মিত ফ্লাইটে যাওয়া শুরু করেছেন।
এ দিকে পাইলট ও কেবিন ক্রুরা করোনা আক্রান্ত হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৌদি আরব, দুবাই, আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ আসিয়ানভুক্ত দেশ, লন্ডন ও ম্যানচেস্টারসহ অন্য সব রুটে গতকাল পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু দু’টি রুটে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ আছে। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
পাইলট-কেবিন ক্রু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচলে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না তা জানতে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, সমস্যা এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আস্তে আস্তে এই ঢেউ আমাদের এখানেও পড়তে পারে। তবে বিমানের শিডিউল ফ্লাইটগুলো এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে বলে জানান তিনি। ক্যানটন ও হংকং কার্গো ফ্লাইট বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যাঁ, সেটি বন্ধ আছে। আমরা এখন প্রবাসী ও ওমরাহ যাত্রীদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ বিমানযাত্রীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি লাভটাও দেখে থাকে। ১৭ পাইলট ও ৭০ কেবিন ক্রু করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের যখন ফ্লাইট পরিচালনার শিডিউল আসবে তখন (রাউন্ড) কিন্তু আবার এর প্রভাব আমাদের শিডিউল ফ্লাইটগুলোর ওপর পড়তে পারে।
বিমানের শিডিউল ফ্লাইটগুলো এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে বলে জানান তিনি। ক্যানটন ও হংকং কার্গো ফ্লাইট বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যাঁ সেটি বন্ধ আছে। আমরা এখন প্রবাসী ও ওমরাহ যাত্রীদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ বিমান যাত্রীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি লাভটাও দেখে থাকে। ১৭ পাইলট ও ৭০ কেবিন ক্রু করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের যখন ফ্লাইট পরিচালনার শিডিউল চলে আসবে, তখন (রাউন্ড) কিন্তু আবার এর প্রভাব আমাদের শিডিউল ফ্লাইটগুলোর ওপর পড়তে পারে।
বিমানের বলাকা ভবন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম থেকেই দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে এর সংখ্যা দেশেও বাড়তে থাকে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এর থেকে বাদ যাচ্ছেন না বিমান চলাচলের সাথে সম্পৃক্ত ককপিট ক্রু ও কেবিন ক্রুরাও।
গতকাল বিমানের বলাকা ভবনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শুরুতেই সম্ভবত ফ্লাইট অপারেশনের সাথে সম্পৃক্ত একজন শীর্ষ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ। তার মতো একে একে গতকাল পর্যন্ত আরো ১৭ জন ককপিট ক্রু (পাইলট) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। একইভাবে ফ্লাইটের ভেতরে যাত্রীদের সেবা দেয়ার যারা কাজ করে থাকেন, সেই কেবিন ক্রুরাও এবার একে একে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও জানা গেছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে বিমানের একজন কেবিন ক্রু তার সংশ্লিষ্ট বিভাগে মেসেজ পাঠিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে বিমানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে জানান, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের মধ্যে যারা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। সবাই বাসায় থেকে বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ডাক্তারের পরামর্শে চলছেন। এর মধ্যে যাদের ১৪দিন হয়েছে তারা আবার ফ্লাইট পরিচালনায় যোগ দিচ্ছেন।
গতকাল বিমানের একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে পাইলটদের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাতে গিয়ে বলছেন, পাইলট আক্রান্তের এমনও ঘটনা ঘটেছে, এয়ারক্রাফটে ওঠার আগ মুহূর্তে পাইলট জানতে পারেন তিনি করোনা টেস্ট পরীক্ষায় পজিটিভ। পরে ফ্লাইটে না গিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছেন। আবার এমনও ঘটনা ঘটেছে ঢাকা থেকে ফ্লাইট নিয়ে আবুধাবি যাওয়ার পর এয়ারপোর্টে পিসিআর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার পর একজন পাইলটের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট ধরার ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই পাইলটকে আবুধাবিতেই ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ করে তার পর দেশে আসতে হয়েছে। বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের করোনা পরীক্ষার টেস্ট একটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে করানো হচ্ছে। কোম্পানির প্রতিনিধিরা যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে কেবিন ক্রুদের অপারেশন্স বিল্ডিং থেকে এবং ককপিট ক্রদের স্যাম্পল তাদের বাসায় গিয়ে এখন সংগ্রহ করছেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৬টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে দুবাইয়ের শারজাহতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে। তবে আপাতত ক্যানটন ও হংকং রুটে কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement