২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলুর দরপতন : বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর শিবনগর ইউনিয়নের বুজরুক এলাকার একটি ক্ষেতে আলু তুলছেন কৃষক: নয়া দিগন্ত -

এ বছর আলুর ফলন ভালো হলেও মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষকরা। উপজেলার মাঠে মাঠে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া আর সময় মতো সার ও বীজ এবং কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানের কারণে এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিদফতর। কিন্তু বাজারে আলুর আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। এতে আলুর দাম ভালো না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
আলুচাষিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, যারা আগে আলু তুলেছেন তারা বেশ ভালো দাম পেয়েছেন। বর্তমানে যারা আলু তুলে বিক্রি করছেন, তাদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ, শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও উঠছে না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন, তাদের আরো বেশি লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পলিপাড়া, গোয়ালপাড়া, শিবনগর, পলিশিবনগর, বুজরুক শিবনগর, পাঠকপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে চাষিরা নাওয়া খাওয়া ভুলে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সারা দিন, যেন দম ফেলানোর ফুরসত নেই।
স্থানীয় ফুলবাড়ী পৌর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে প্রতি মণ ক্যারেট আলু ৩৬০, গ্যানোলা আলু ২৪০, কাটিনাল ৩৬০, লাল পাটনাই ৪০০, সাদা পাটনাই ৪৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ ক্যারেট আলু ৪৪০, গ্যানোলা আলু ৪০০ টাকা, কাটিনাল ৫২০ টাকা, লাল পাটনাই ৬০০ টাকা, সাদা পাটনাই ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
উপজেলার পাঠকপাড়া গ্রামের আলুচাষি আবুল হোসেন ও কালু মিয়া বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আলু তুলেছেন। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৭০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। ৩০৫ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করে হয়েছে সাড়ে ২১ হাজার টাকা। তাতে লোকসান হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। মাঠে আরো আলু রয়েছে। দশ-পনেরো দিন পর সেগুলো তুলতে হবে। কিন্তু বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
পৌর বাজারের পাইকার সামিউল ইসলাম ও আনন্দ কুমার বলেন, কাঁচামালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। এটা নির্ভর করে আমদানির ওপর। আমদানি বেশি হলে দাম কমে যায়। ব্যাবসায়ী অজিত বলেন আমি দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারে আলু মজুদ করে আসছি, এ বছরেও রেখেছিলাম, নতুন আলু আসার আগেই সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়া গেছে, তাই লাভের আশায় অনেকেই আলু চাষ আবাদ করেছে। এতে আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আলুর দাম কমে গেছে, তবে ফাল্গুন-চৈত্র মাসের দিকে হিমাগারে আলু রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা আলু কেনা শুরু করলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজ ম্যানেজার হাসনাত বলেন, এ বছর ৫৫ কেজির বস্তা, এক লাখ ৬০ হাজার ২০০ বস্তা আলু মজুদ রাখা হয়, যা এক মাস আগেই স্টোর থেকে বের হয়ে গেছে। বর্তমানে স্টোরে আলু মজুদ নেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর এক হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪২ হেক্টর জমিতে আলু তোলা হয়েছে ৯ হাজার ৪০ মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা চেয়েও অধিক জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলা কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শসহ সহযোগিতায় এ বছর এই উপজেলায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের কিছু মজুদ আলু থাকায় আগাম জাতের আলুর দাম কমতির দিকে। সেগুলো শেষ হলেই নতুন আলুর চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়বে। এতে চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।


আরো সংবাদ



premium cement